বাসক পাতার রস খাওয়ার নিয়ম - বাসক পাতার ঔষধি গুনাগুন

বাসক পাতার রস খাওয়ার নিয়ম আমরা হয়তো অনেকেই জানিনা বাসক পাতা কি। বাসক পাতা শরীরের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করে আজ আমরা জানবো বাসক পাতার ঔষধি গুনাগুন ও খেলে কি কি রোগ থেকে উপকার পাওয়া যায়।

বাসক পাতার ব্যবহার

প্রিয় পাঠক বাসক পাতার সম্বন্ধে হয়তো আমরা অনেকেই জানিনা আসুন জেনে নেই বাসক পাতা দিয়ে বা বাসক পাতার রস খেয়ে কতগুলো রোগ আমরা সারাতে পারি। এবং আমাদের শরীরের জন্য কতটা উপকার করে চলুন দেখিনি বাসকপাতার উপকারিতা ও অপকারিতা।

পোস্ট সূচীপত্র বাসক পাতার রস খাওয়ার নিয়ম - বাসক পাতার ঔষধি গুনাগুন

    বাসক পাতার রস খাওয়ার নিয়ম

    বাসক পাতার রস খাওয়ার নিয়মগুলি একটি প্রাকৃতিক ও স্বাস্থ্যকর খাবার সম্পর্কে খ্যাতি দিতে পারে। এই পাতাগুলি সাধারণত পুঁই বা স্পাইনাচ নামে পরিচিত। তারা উচ্চ আঁশে ভিটামিন, খনিজ, ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সরবরাহ করে। তাই, বাসক পাতার রস খাওয়ার নিয়মগুলি হলো:

    • শুধুমাত্র পরিষ্কার, সুস্বাস্থ্যকর পাতা ব্যবহার করুন।
    • পাতা ধুয়ে নিন যাতে থাকা কোনও মলিনতা ও অপরিষ্কার অংশ উপস্থিত থাকে না।
    • পাতাগুলি কাটার পূর্বে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে নিন যাতে ব্যতিক্রম থাকে।
    • পাতাগুলি চেক করুন যাতে কোনও কীটনাশক বা অতিরিক্ত পরিমাণের কীটক না থাকে।
    • বাসক পাতা পরিষ্কার করুন যাতে মুখে কোনো অপছন্দনীয় অবস্থা না থাকে।
    • মুখ ও হাঁটু পরিষ্কার করে পাতার রস খাবেন।
    • বাসক পাতা ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করুন।
    • সবথেকে প্রথমে ভালো মানের বাসক পাতা নিন।
    • পাতা ধুয়ে পরিষ্কার করুন।
    • একটি পাতা নিন এবং তা ঠান্ডা পানিতে অল্প সময় ভিজিয়ে রাখুন।
    • ভিজা পাতা থেকে রস প্রাপ্ত করতে পারেন।
    • রস প্রাপ্ত করার পরে পাতাটি ঠান্ডা পানিতে ভিজিয়ে বারবার চোষুন না। পাতাটি শুধুমাত্র রস নিন।
    • প্রথমেই, পাতা পরিশোধিত এবং পরিষ্কার করুন। ভালো উত্তল জলে পাতা ধুয়ে নিন।
    • পাতা বাছাই করার সময়, সতর্কতা অবলম্বন করুন। আপনি যদি পাতার প্রাকৃতিক উদ্ভিদের সাথে পরিচিত না হন, একজন পেশাদার পরামর্শকের সাথে যোগাযোগ করুন।
    • বাসক পাতা থেকে রস আছে যা জলের মতো পানির মধ্যে অবস্থিত। আপনি এই রস খাতে পারেন বা না, তা আপনার ব্যক্তিগত পছন্দ এবং শারীরিক অবস্থার উপর নির্ভর করে।
    • পাতার রস প্রথমে মুখে নিন এবং অনুভব করুন। ধীরে ধীরে স্বাদ পরিশোধন করুন এবং আপনার পছন্দমত হলে পরিমাপ করুন।
    • পাতার রস গ্রহণের পর তা মিথা হতে পারে। তবে ধ্যান দিন যে, এটি শক্তিশালী তাণ্ডবের মাত্রার সঙ্গে সম্পর্কিত হতে পারে, তাই মাত্রা সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করুন।

    এই নিয়মগুলি মেনে চললে আপনি বাসক পাতার স্বাদ উপভোগ করতে পারবেন।

    বাসক পাতার ঔষধি গুনাগুন

    বাসক পাতা একটি বিশেষ ধরনের পাতা, যা বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান এবং অন্যান্য দেশগুলোতে বহুপ্রয়োজন। এই পাতার গুণাগুণ অনেকগুলি রয়েছে, যেমন প্রাচীন সময়ে থেকেই বাসক পাতা চিকিৎসার উপায় হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এটির পাতার উপকারিতা বাড়তে এবং উপকারিতা মানে সহজ হওয়ায় এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ঔষধিতে পরিণত হয়ে গেছে।বাসক পাতার চা খাবারের সাথে খুব সামান্য অনুপ্রাণিত হয়ে থাকে, তাই এটি খাবারের পাচন সিস্টেমকে সাহায্য করে এবং গ্যাস্ট্রিক সমস্যা মোকাবেলা করে।বাসক পাতা ধাতু ও ভিটামিনের একটি ভাল উৎস হিসেবে পরিচিত।এটি মানসিক সমস্যার চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়, যেমন চিন্তা ও উদ্বেগের সময় এটি শান্তি ও প্রশান্তি সরব হিসেবে ব্যবহৃত হয়।বাসক পাতার চা ব্যবহারের মাধ্যমে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হয়, যা হৃদরোগ ও অন্যান্য স্বাস্থ্যসম্পর্কিত সমস্যার প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে।

    বাসক পাতা একটি প্রাচীন ও প্রতিষ্ঠিত ঔষধি হিসেবে পরিচিত। এটির গুনাগুন অনেকগুলি রয়েছে, যেমনঃ

    • প্রতিষ্ঠাত্মক উচ্চারণে বাসক পাতার চা একটি প্রচলিত সরব। এটি পাচন প্রক্রিয়াকে সহায়ক করতে পারে এবং অনেক লোকের প্রিয়তম হিসেবে গণ্য।
    • বাসক পাতা বিভিন্ন ধরনের মুখের সন্ধান নিরসনে সাহায্য করে এবং মুখের ব্যথা মোকাবেলা করে।
    • বাসক পাতা প্রতিদিনের খাবারের রূপে এটি পাচন সিস্টেমকে উন্নত করতে সহায়ক।
    • এটি অনেক মানসিক সমস্যার চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়, যেমন চিন্তা ও মনোবিজ্ঞানিক চাপের হলে।
    • বাসক পাতা ব্যবহারের মাধ্যমে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হয়।
    • পাচন সিস্টেমে সাহায্য: বাসক পাতা একটি স্বাভাবিক পাচন সিস্টেমে সাহায্য করতে পারে। এটি পাচনের প্রক্রিয়াকে উন্নত করে এবং অতিরিক্ত গ্যাস, এসিডিটি, পেটের ব্যথা ইত্যাদির মুক্তি দেয়।
    • শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা সমাধান: বাসক পাতা শ্বাসের সমস্যা যেমন অস্থিতি, ক্ষতিকারক অস্থিতির হ্রাস, শ্বাসকষ্টে সাহায্য করতে পারে। এটি এলার্জি, এশমা ইত্যাদি সাধারণ শ্বাস-প্রশ্বাস সমস্যার চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।
    • মানসিক স্বাস্থ্য উন্নতি: বাসক পাতা মানসিক চিন্তামুক্তির জন্য প্রভাবশালী হতে পারে। এটি তনাব ও চিন্তা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে এবং মনোবিক্ষেপের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হতে পারে।
    • রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ: বাসক পাতা রক্তচাপের নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে। এটি রক্তের চাপ কমিয়ে নিতে সাহায্য করে এবং হার্ট হেলথের জন্য উপকারী হতে পারে।
    • ক্যান্সারের প্রতিরোধ: বাসক পাতা ক্যান্সারের প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে কারণ এটি পর্যাপ্ত প্রাকতন্ত্রিক অন্তিমাত্রা ও পলিফেনল সম্পন্ন থাকে।

    বাসক পাতার রস খাওয়ার নিয়ম - বাসক পাতার ঔষধি গুনাগুন

    এইভাবে, বাসক পাতার ব্যবহার অনেকগুলি স্বাস্থ্য সমস্যার চিকিৎসা ও প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। তবে, যে কোনও নতুন ঔষধি বা পুনরাবৃত্তি শুরু করার আগে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করা উচিত।

    বাসক পাতার ব্যবহার

    বাসক পাতার রস খাওয়ার নিয়ম বাসক পাতার বহুমুখি ব্যবহার রয়েছে। এটি একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যকর উদ্ভিদ। বাসক পাতার বিভিন্ন ব্যবহার নিম্নরূপ:

    খাদ্য হিসেবে ব্যবহার:

    • শাক/তরকারি হিসেবে পাতা রান্না করে খাওয়া হয়।
    • ভর্তা, ঝোল, দালনা ইত্যাদিতে পাতা দেওয়া হয়।
    • পাতার রস বানিয়ে খাওয়া হয় (ওজন কমানো এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর উপকারিতার জন্য)।
    • পাতা গুঁড়িয়ে পেস্ট বানানো হয় এবং বিভিন্ন রান্নায় ব্যবহার করা হয়।

    ঔষধি হিসেবে ব্যবহার:

    বাসক পাতা থেকে তৈরি ঔষধ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, পাচনসমস্যা ইত্যাদি রোগে কার্যকর।

    বাসক পাতার রস এবং পেস্ট অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট গুণের কারণে বিভিন্ন ত্বকরোগে ব্যবহৃত হয়।

    পাতার ছোবড়া কাপড় রাঙানোর কাজে ব্যবহৃত হয়।

    অন্যান্য ব্যবহার: 

    • বাসক পাতার রস চুল গজানোর জন্য শ্যাম্পু হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
    • বাসক পাতা কৃষি পোকা দমনে জৈব কীটনাশক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
    • জৈব সার হিসেবে বাসক পাতার বর্জ্য ব্যবহার করা হয়।
    • বাসক পাতার কথা বলা হয়েছে হিন্দু শাস্ত্রে, এর পবিত্রতার কারণে পূজা অনুষ্ঠানে ব্যবহৃত হয়।

    সুতরাং বাসক পাতার একাধিক ব্যবহার রয়েছে। এটি একটি পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ ও অত্যন্ত উপকারী উদ্ভিদ যা খাদ্য, ঔষধ এবং অন্যান্য বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। বাসক পাতা যদিও অনেক গুণসমৃদ্ধ এবং স্বাস্থ্যকর, তবে এর অনিয়ন্ত্রিত বা অতিরিক্ত ব্যবহারে কিছু অপকারিতা রয়েছে:

    বাসক পাতার অপকারিতা

    • অক্সালেট সমৃদ্ধ: বাসক পাতাতে অক্সালেট অ্যাসিড প্রচুর পরিমাণে থাকে। এই অক্সালেট অ্যাসিডের জমে কিডনি পাথর হতে পারে। এছাড়া যারা অক্সালেট রোগে ভুগছেন তাদের জন্য ক্ষতিকর।
    • দুর্বল গ্রাহকদেরের জন্য ক্ষতিকর: বাসক পাতার রসে থাকা এক ধরনের তরল অ্যাসিড (অক্সালিক অ্যাসিড) দুর্বল পাচনশক্তি সম্পন্ন ব্যক্তিদের গ্যাসট্রিক সমস্যা করতে পারে।
    • রক্তচাপের জন্য বিপদজনক: বাসক পাতায় থাকা পটাসিয়াম স্রাব উচ্চ রক্তচাপ রোগীদের জন্য বিপদজনক হতে পারে।
    • গর্ভাবস্থায় মারাত্মক: বাসক পাতায় উপস্থিত কিছু রাসায়নিক দ্রব্য গর্ভাবস্থায় ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। তাই গর্ভাবস্থায় এড়িয়ে চলা উচিত।
    • রক্তের গাঢ়ত্ব বাড়ায়: বাসক পাতা রক্তের গাঢ়ত্ব বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই যারা রক্ত জমাট সংক্রান্ত রোগে ভুগছেন তারা সাবধানতা অবলম্বন করবেন।
    • রক্ত বিরল হওয়ার ঝুঁকি: অতিরিক্ত পরিমাণে বাসক পাতা গ্রহণ করলে রক্ত পাতলা হয়ে বিরল হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। 

    সুতরাং নিয়ম মেনে ও পরিমিত পরিমাণে বাসক পাতা গ্রহণ করলে এর কোন অপকারিতা থাকবে না। তবে অতিরিক্ত গ্রহণ এবং কিছু বিশেষ অবস্থায় এর অপকারিতা রয়েছে যা মাথায় রাখা প্রয়োজন।

    লাল বাসক পাতার উপকারিতা

    লাল বাসক পাতা একটি পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ শাক। এর বিভিন্ন উপকারিতা নিম্নরূপ:

    ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক: লাল বাসক পাতাতে থাকা ক্যাম্পটেরিন এবং অক্সালিক অ্যাসিড জরায়ুর দক্ষতা বৃদ্ধি করে। ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।

    রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ: লাল বাসক পাতায় থাকা ভিটামিন-বি এবং পটাসিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক ভূমিকা রাখে।

    ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ: লাল বাসক পাতাতে থাকা ইনসুলিন সহায়ক উপাদান রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে।

    পাচনক্রিয়া সহজ করে: লাল বাসক পাতাতে থাকা প্রচুর পরিমাণ ফাইবার পাচনক্রিয়াকে সহজ করে।

    এন্টি-অক্সিডেন্ট গুণ: লাল বাসক পাতাতে থাকা এন্টি-অক্সিডেন্ট শরীরকে মুক্ত শিকড় থেকে রক্ষা করে।

    পথরী প্রতিরোধ: লাল বাসক পাতা বৃক্ক এবং পিত্তথলীর পাথরী প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে।

    ত্বক স্বাস্থ্য উন্নতি: এতে থাকা এন্টি-ইনফ্লেমেটরি, এন্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং এন্টি-এজিং গুণ ত্বকের স্বাস্থ্য উন্নতি করে।

    চুল গজানো: লাল বাসক পাতার রস চুল গজানোর জন্য শ্যাম্পু হিসাবে ব্যবহৃত হয়।

    ক্যান্সার প্রতিরোধী: লাল বাসক পাতাতে উপস্থিত ভিটামিন এ, বিটা-ক্যারোটিন, খনিজ লবণ ও এন্টি-অক্সিডেন্টের জন্য এটি শরীরকে ক্যান্সার থেকে রক্ষা করে।

    সুতরাং লাল বাসক পাতা নিরাপদ পরিমাণে গ্রহণ করলে শরীরের বিভিন্ন সমস্যা দূর হওয়ার পাশাপাশি স্বাস্থ্য উন্নতিও হয়।

    বাসক পাতার ব্যবহৃত অংশ 

    বাসক পাতার ব্যবহৃত অংশগুলি

    বাসক এক অত্যন্ত পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ উদ্ভিদ। এর প্রত্যেকটি অংশই কিছু না কিছু উপকারী গুণ সমৃদ্ধ। প্রধান ব্যবহৃত অংশগুলি হলো:

     পাতা:

    বাসক পাতা এই উদ্ভিদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ। পাতা থেকেই প্রস্তুত হয় শাক/ তরকারি, ভর্তা, ঝোল, রস ইত্যাদি। পাতাতে প্রচুর পরিমাণে ক্যাম্পটেরিন, অক্সালিক অ্যাসিড, ভিটামিন এ, বি, সি, ক্যালসিয়াম, লৌহ ইত্যাদি থাকে।

    মূল:

    বাসক মূল বা গাছের শিকড়ও নানা উপকারিতা রয়েছে। মূল থেকে তৈরি হয় অনেক ঔষধ। মূলে থাকে এন্টি-ইনফ্লেমেটরি, এন্টি-ফাংগাল ও এন্টি-মাইক্রোবায়েল গুণ। এছাড়াও মূল ত্বকের লাল দাগ দূর করতে সাহায্য করে।

    বীজ: 

    বাসক বীজ থেকে তৈরি হয় বাসক তেল। এই তেল স্কিন ক্যার ও হেয়ার ক্যার প্রোডাক্টে ব্যবহৃত হয়। বীজে আছে এন্টি-ব্যাকটেরিয়া এবং এন্টি-ফাংগাল গুণ।

    ফুল:

    প্রাচীন সময় থেকেই বাসক ফুলকে ঔষধিগুণের ওপর নির্ভর করা হয়ে আসছে। ফুলে থাকে এন্টি-অক্সিডেন্ট, এন্টি-ডায়াবেটিক এবং লিভার প্রোটেক্টিভ গুণ।

    বাকি অংশগুলি:

    বাসক পাতার মাঝখানের ডাঁটা এবং পাতার খোসা/ ছোবড়া দিয়েও বিভিন্ন ঔষধ তৈরি করা হয়। পাতার খোসায় কাপড় রাঙানোর জন্য ব্যবহৃত হয়।বাসক গাছের প্রায় সব অংশই গুরুত্বপূর্ণ ঔষধি ও স্বাস্থ্যকর উপকারিতার ভাণ্ডার বহন করে। একই সাথে খাদ্য হিসেবেও এর গুরুত্ব অপরিসীম। সুতরাং বাসক পাতার সঠিক ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

    বাসক পাতার বৈশিষ্ট্য 

    বাংলাদেশে বাসক পাতা একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় ও ব্যাপকভাবে গৃহীত শাক। এর বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপ:

    বাহ্যিক বৈশিষ্ট্য:

    • বাসক পাতা সাধারণত লম্বা ও অণ্ডাকার আকৃতির হয়। 
    • রঙ সাদা-সবুজ বা লাল-সবুজ হতে পারে। লাল বাসকের চাহিদা বেশি।
    • পাতার পৃষ্ঠভাগ মসৃণ এবং ছোট ছোট রেখার দাগ থাকে। পেছনের দিকে মাটির রঙের হলদে-সবুজ রঙয়ের রেখা থাকে।
    • পাতার মাঝখানে একটি ডাঁটা থাকে যা কঠিন ও খাদ্যরূপে গ্রহণযোগ্য নয়।
    • বাসক পাতার গন্ধ অনেকটা গাজরের মতো থাকে।

    রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য:

    • বাসক পাতা ক্যাম্পটেরিন, অক্সালিক অ্যাসিড, ভিটামিন এ, বি-কমপ্লেক্স, সি, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, লৌহসমৃদ্ধ। 
    • এর এন্টি-অক্সিডেন্ট গুণ রয়েছে যা মুক্ত শিকড় থেকে রক্ষা করে।  
    • এতে উপস্থিত ইনসুলিন-সেনসিটাইজিং ব্যাক্টেরিয়া ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
    • এর পটাসিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে।
    • অক্সালিক অ্যাসিড যকৃতের দক্ষতা বৃদ্ধি করে।

    অন্যান্য বৈশিষ্ট্য:

    • বাসক পাতা কঠিন হলেও রান্নার পর নরম হয়ে যায়। 
    • আলোচ ভাবে চেটে খেয়ে অস্বাস্থ্যকর কিছু লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
    • এর রস বাসী হলেও খাদ্যগুণ সমৃদ্ধ।
    • দীর্ঘদিন জলে বসিয়ে রাখলে বিষাক্ত উপাদান বের হয়ে আসে।
    • মূল থেকে অনেক ঔষধি প্রস্তুত করা যায়।

    বাসক পাতার বৈশিষ্ট্যগুলো বিবেচনা করে সঠিকভাবে ব্যবহার করলে তা স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। এর উচিত মাত্রা গ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

    বাসক পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা

    বাসক পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা নিম্নরূপ:

    উপকারিতা:

    • ওজন নিয়ন্ত্রণ: বাসক পাতায় থাকা ক্যাম্পটেরিন ও অক্সালিক অ্যাসিড জরায়ুর কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে, যা ওজন কমাতে সহায়ক।
    • রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ: এতে উপস্থিত পটাসিয়াম ও ভিটামিন-বি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
    • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ: ইনসুলিন সংবেদনশীল উপাদান রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। 
    • পাচনশক্তি বৃদ্ধি: প্রচুর ফাইবার পাচনক্রিয়াকে সচল রাখে।
    • এন্টি-অক্সিডেন্ট: ভিটামিন এ ও বিটা-ক্যারোটিন শরীরকে মুক্ত শিকড় থেকে রক্ষা করে।
    • পথরী প্রতিরোধ: বৃক্ক ও পিত্তথলীর পাথরী রোগ প্রতিরোধে সহায়ক। 
    • ত্বক এবং চুল স্বাস্থ্য: এতে থাকা এন্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং এন্টি-এজিং গুণ ফলপ্রসূ।

    অপকারিতা:

    • অক্সালেট সমস্যা: অতিরিক্ত অক্সালিক অ্যাসিড কিডনি পাথরের কারণ হতে পারে।
    • অ্যাসিডিটি: দুর্বল পাচনশক্তি সম্পন্নদের অ্যাসিডিটি বৃদ্ধির সম্ভাবনা আছে।
    • রক্তচাপ বৃদ্ধি: পটাসিয়াম উচ্চ রক্তচাপ রোগীদের ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। 
    • গর্ভাবস্থায় বিপজ্জনক: বাসক গর্ভাবস্থায় ক্ষতিকর হতে পারে।
    • রক্ত জমাট: রক্তের গাঢ়তা বৃদ্ধি করে থ্রম্বোসিসের আশংকা থাকে।
    • রক্ত বিরলতা: অতিরিক্ত গ্রহণে রক্তবিরলতা দেখা দিতে পারে।

    সুতরাং পরিমিত পরিমাণে ও সাবধানতার সাথে বাসক পাতা গ্রহণ করলে এর উপকারিতাগুলো ভোগ করা যাবে। অতিরিক্ত এবং নিষিদ্ধ অবস্থায় এর অপকারিতা এড়ানো প্রয়োজন।

    সচরাচর প্রশ্ন ও উত্তর

    প্রশ্নঃ বাসক পাতা খেলে কি হয়?

    উত্তরঃ পরিপাকতন্ত্রে উপকারী বাসক পাতায় থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও ফাইবার পরিপাকতন্ত্রকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক বাসক পাতায় উপস্থিত পটাসিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।  ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক বাসক পাতা ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি করে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। অ্যান্টি-ক্যান্সার গুণাবলী বাসক পাতার রয়েছে এ্যান্টি অক্সিডেন্ট যা কিছু ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে। ত্বক সুস্থ রাখতে সহায়ক বাসক পাতার এন্টি-ফাংগাল ও অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল গুণাবলী ত্বককে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।

    প্রশ্নঃ কাশি হলে বাসক পাতা কিভাবে খেতে হয়?

    উত্তরঃ বাসক পাতার রস কিছু বাসক পাতা ধুয়ে পরিষ্কার করুন একটি ব্লেন্ডারে ভালভাবে পিষে রস বের করে নিন রসের সাথে কিছুটা গরম পানি/লেবু রস/মধু মিশিয়ে খান বাসক পাতার চা একচামচ বাসক পাতা কুচি করে নিন এককাপ গরম পানিতে ভিজিয়ে ৫-১০ মিনিট ধরে রাখুন ছেঁকে চা তৈরি করে লেবু রস মধু মিশিয়ে খান বাসক পাতার মাখন আদা, লঙ্কা সহ বাসক পাতা দিয়ে মাখন তৈরি করুন রুটি পরোটার সাথে খান বাসক পাতার তরকারী বাসক পাতা, পেঁয়াজ, রসুন দিয়ে তরকারি বানিয়ে খান বাসক পাতার এন্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং ডিটক্সিফাইং গুণ থাকায় এটি কাশি আরাম পাওয়ায় সাহায্য করে।

    প্রশ্নঃ বাসক পাতার রস খেলে কি হয়?

    উত্তরঃ অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বাসক পাতায় থাকা ইউজেনল কম্পাউন্ড অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি গুণ সম্পন্ন যা জ্বালা, ব্যাথা কমাতে সাহায্য করে। অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এতে থাকা ক্যাম্ফেন, সাইনেওল ইত্যাদি জীবাণুমুক্ত করে শরীর। অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ভিটামিন এ, সি এবং অন্যান্য অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান শরীরের ক্ষতিকারক ফ্রীর্যাডিকেল দূর করে।  হজম শক্তি বৃদ্ধি পেপ্টিক আলসার, পেট ব্যথা এবং গ্যাস নিরাময়ে সহায়ক রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ পটাসিয়াম সমৃদ্ধ হওয়ায় রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।

    প্রশ্নঃ কাশির ক্ষেত্রে বাসক পাতা রস কিভাবে খেতে হয়?

    উত্তরঃ কাশির ক্ষেত্রে বাসক পাতার রস নিম্নোক্ত উপায়ে খেতে পারেন বাসক পাতার তাজা রস তৈরি করুন

    • আধা কাপ বাসক পাতা ধুয়ে পরিষ্কার করুন
    • পাতাগুলো একটি ব্লেন্ডারে ভালভাবে পিষে রস বের করে নিন
    • রস থেকে বাসকের বাকী অংশ ছেঁকে ফেলুন

    রসে অন্যান্য উপকরণ মিশিয়ে নিন:

    • একচামচ মধু/গুড় মিশিয়ে স্বাদ মিষ্টি করুন
    • আধা চামচ গরম জিরা গুঁড়া মিশিয়ে নিন (অপশনাল)  
    • একটু লবণ যোগ করতে পারেন
    • এই মিশ্রণ দিনে ২-৩ বার খান 

    অন্যান্য উপায়:  

    • বাসক পাতার রস গরম পানি/দুধের সাথে মিশিয়েও খেতে পারেন
    • এক চামচ বাসক পাতার রস মধু মিশিয়ে চেটে নিতে পারেন
    • বাসক পাতার চা বানিয়ে পানও করতে পারেন

    বাসক পাতার এন্টি-ইনফ্লেমেটরি, শ্লেষ্মা দ্রাবক এবং জীবাণুনাশক গুণ কাশি আরামে সাহায্য করে। তবে অতিরিক্ত পরিমাণে না খাওয়াই ভাল। ডাক্তারের পরামর্শ অনুসরণ করা উচিত।

    বাসক পাতার সিরাপের উপকারিতা

    বাসক পাতার সিরাপ বিভিন্ন উপকারিতা রয়েছে, যেমন কাশি ও গলা ব্যথা নিরাময়ে সহায়ক বাসক পাতার এন্টি-ইনফ্লেমেটরি ও শ্লেষ্মা দ্রাবক গুণ কাশি ও গলা ব্যথা কমাতে সহায়তা করে। শ্বাসকষ্ট লাঘবকারী এর অ্যান্টি-সাস্পাস্মোডিক গুণ শ্বাসনালীর সংকোচন কমিয়ে শ্বাসকষ্ট লাঘব করে অ্যান্টি মাইক্রোবায়াল গুণাবলী বাসক পাতার এন্টি-ব্যাকটেরিয়াল, এন্টি-ফানগাল ও এন্টি-ভিরাল গুণ শরীরকে সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে। জ্বর এবং যন্ত্রনা নিরসন:  এর অ্যান্টি-পিরেটিক ও অ্যানালজেসিক গুণ জ্বর এবং ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। শরীরকে ডিটক্সিফাই করা বাসক পাতার সিরাপ শরীরের বিভিন্ন বিষাক্ত পদার্থ বের করে দেয়। পরিপাক ব্যবস্থাকে সহায়তা এর ডাইজেস্টিভ এনজাইমগুলো খাবারের পরিপাক সহজ করে। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। তবে অতিরিক্ত বা দীর্ঘদিন বাসক পাতার সিরাপ সেবনে ক্ষতিকর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। এজন্য ডাক্তারের পরামর্শ অনুসরণ করা উচিত।

    বাসক সিরাপের পার্শ প্রক্রিয়া

    বাসক পাতার সিরাপ তৈরির প্রক্রিয়া নিম্নরূপ প্রয়োজনীয় উপকরণ তাজা বাসক পাতা প্রায় 500 গ্রাম চিনি গুড়  প্রায় 500 গ্রামপানি  প্রায় 4 কাপ  লেবু রস 1 লেবুর রস বাসক পাতাগুলো ভালভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করুন এবং কুচি করে রাখুন। একটি পাত্রে পানি উত্তপ্ত করে বাসক পাতাগুলো দিন। পাত্র ঢেকে দিয়ে 15-20 মিনিট ধরে ফুটিয়ে রাখুন। এক পর্যায়ে আবার উত্তপ্ত করে পাতাগুলোকে পানির সাথে ভাল করে নাড়াচাড়া করুন যাতে বাসক পাতার রস বের হয়ে আসে। এক কাপড়ের/চায়নিক ছেঁকের মাধ্যমে বাসক পাতার রস আলাদা কদূন। এই বাসক রসে চিনি/গুড় এবং লেবুর রস মিশিয়ে একই পাত্রে রেখে গরম করুন। পাতলা ঘন অবস্থায় আসলে আঁচ থেকে নামিয়ে নিন। অবশ্যই গাঢ় হওয়া পর্যন্ত গরম রাখবেন না। বাসকের গন্ধ ও স্বাদ অনুযায়ী লবণ মিশাতে পারেন। এবার ঠান্ডা হলে বোতলজাত করে রেফ্রিজারেটরে সংরক্ষণ করুন। এই প্রক্রিয়ায় বাসক সিরাপ প্রস্তুত করা যায়। প্রয়োজনে গরম পানি বা দুধের সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন।

    বাসক সিরাপ এর দাম কত

    বাসক সিরাপের দাম বাজারে পণ্যের গুণগত মান, ব্র্যান্ড এবং পরিমাণ অনুযায়ী পরিবর্তিত হতে পারে। তবে সাধারণভাবে বাংলাদেশের বিভিন্ন বড় শহরের বাজারে বাসক সিরাপের দাম দাম আপ ডাউন হতে পারে।

    • 100 মিলিলিটার বাসক সিরাপের দাম: 70-110 টাকা
    • 200 মিলিলিটার বাসক সিরাপের দাম: 130-200 টাকা
    • 500 মিলিলিটার বাসক সিরাপের দাম: 280-400 টাকা  

    উল্লেখ্য, গ্রামীণ এলাকায় বাসক সিরাপের দাম আরও কম হতে পারে। আবার দোকানে বানানো বাসক সিরাপের দাম কম এবং কারখানায় বানানো সিরাপের দাম বেশি হতে পারে। সুতরাং গুণগত মান ও পরিমাণ অনুযায়ী মূল্যের পার্থক্য দেখা যেতে পারে।

    পরিশেষে

    বাসক পাতার রস খাওয়ার নিয়ম ও বাসক পাতার ঔষধি গুনাগুন সম্পর্কে হয়তো আমরা অনেকেই জানতাম না। বাসক পাতা দিয়ে কতগুলো রোগ সারানো যায় সেই সম্পর্কে আপনাদের সাথে আমি আমার এই পোস্টটিতে শেয়ার করেছি আশা করি আপনি আমার এই পোস্টটি পড়ে উপকৃত হবেন। তাহলে আপনি আপনার বন্ধুদের কাছে শেয়ার করবেন।

    প্রিয় পাঠক বাসক পাতার সম্পর্কে আপনাদের কাছে আমি আমার এই পোস্টটিকে তুলে ধরেছি বাসক পাতার ঔষধি একটি পাতা। এবং এটা খেয়ে অনেক ভাবে শরীরের উপকার পাওয়া যায় আমার পোস্টটিতে এর রস খাওয়ার নিয়ম আমি তুলে ধরেছি আশা করি আপনি উপকৃত হবেন ধন্যবাদ।

    এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

    পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
    এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
    মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

    বিডি অনলাইন স্মার্ট এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

    comment url