পাইলস থেকে চিরতরে মুক্তির উপায় - পাইলস এর ঘরোয়া চিকিৎসা
পাইলস থেকে চিরতরে মুক্তির উপায় আসুন জেনে নেই । আমরা পায়েলসের জন্য কতই না
কষ্ট করে থাকি পাইলস একটি মারাত্মক রোগ। এই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য
আমার পোস্টটিতে তুলে ধরেছি এবং পাইলসের ঘরোয়া চিকিৎসা সম্বন্ধেও আমি
বিস্তারিত আলোচনা করেছি।
প্রিয় পাঠক পাইলস নিয়ে আমরা কতই না চিন্তিত । আমি আমার এই পোস্টটিতে তুলে ধরেছি পাইলস থেকে মুক্তির উপায় এবং পাইলসের ঘরে বসে চিকিৎসা পাইলস থেকে চিরতরে মুক্তি পেতে এই পোস্টটি পড়ুন নিম্নে দেওয়া হল।
পোস্ট সূচিপত্র পাইলস থেকে চিরতরে মুক্তির উপায় - পাইলস এর ঘরোয়া চিকিৎসা
- কি খেলে পাইলস ভালো হয়
- পাইলসের ফোলা কমানোর উপায়
- পায়েলসের চিকিৎসা কোথায় ভালো হয়
- পাইলসের এলোপ্যাথিক ওষুধ
- পাইলসের ব্যায়াম সম্বন্ধে জানুন
- পাইলসের ঔষধ হোমিওপ্যাথিক
- কোন কোন খাবার খেলে পাইলস ভালো হয়
- কোন কোন খাবার খেলে পাইলস বেড়ে যায়
- পাইলস হলে কি ডিম খাওয়া যাবে
- গরুর গোস্ত খেলে কি পাইলস বেড়ে যায়
- পাইলস এর ঘরোয়া চিকিৎসা
- লেখকের মন্তব্য
কি খেলে পাইলস ভালো হয়
পাইলস বা বৃদ্ধাঙ্গুরি রোগ নিরাময়ে খাদ্যাভ্যাসের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। পাইলস থেকে চিরতরে মুক্তির উপায় এই রোগের লক্ষণ প্রশমিত করতে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে নিম্নলিখিত খাবারগুলি খুবই উপকারী:
শাক-সবজি: পেঁয়াজ, রসুন, গাজর, বীটরুট, লাল আলু ইত্যাদি শাক-সবজিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, খনিজ পদার্থ এবং অপরিষ্কৃত ফাইবার। এগুলি পরিপাক প্রক্রিয়াকে সহজ করে এবং মলদ্রব নরম রাখতে সাহায্য করে। ফলে পাইলস রোগীদের মলত্যাগে কষ্ট কমে আসে।
ফলমূল: কলা, আম, কমলালেবু, আঙ্গুর, নাশপাতি ইত্যাদি ফলমূলগুলিতে থাকে অপরিষ্কৃত ফাইবারের প্রাচুর্য। এই ফাইবার মলদ্রবকে নরম রাখতে সাহায্য করে এবং পরিপাক প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রিত করে। ফলে পাইলসজনিত যন্ত্রণা কমে আসে।
শস্য ও ডাল: গম, ভুট্টা, মসুরডাল, মুগডাল ইত্যাদি শস্য ও ডালের মধ্যে থাকে অপরিষ্কৃত ফাইবার। এগুলি মলদ্রবকে নরম রাখতে সহায়তা করে এবং মলত্যাগকে সহজ করে তোলে।
প্রচুর পরিমাণে পানি পান: যথেষ্ট পরিমাণে পানি পানের ফলে মলদ্রব পাতলা ও নরম হয়। ফলে পাইলস রোগীদের মলত্যাগ সহজতর হয়ে পড়ে।
দই/আচার: দই ও আচারে থাকে প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া যা পরিপাক প্রক্রিয়াকে স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। ফলে পাইলস জনিত সমস্যা প্রশমিত হয়।
আরো পড়ুনঃ কিভাবে নিজেকে সুন্দর রাখা যায় ২০ টি উপায় জেনে
পাইলস রোগীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হল অ্যালকোহল, তামাক, চরবিযুক্ত ও লবণাক্ত খাবার এড়িয়ে চলা। এছাড়াও নিয়মিত শারীরিক সচলতা বজায় রাখা অত্যন্ত প্রয়োজন। সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনযাত্রার পরিবর্তনের মাধ্যমে অনেকাংশে পাইলস রোগের লক্ষণগুলি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
পাইলসের ফোলা কমানোর উপায়
পাইলস থেকে চিরতরে মুক্তির উপায় পাইলসের ফোলা কমানোর জন্য নিম্নলিখিত পদ্ধতিগুলি অনুসরণ করা যেতে পারে:
- পরিপক্ক কলার রস খাওয়া: কলা প্রদাহবিরোধী ও মলদ্রাবক গুণসম্পন্ন। এটি পাইলসের ফোলা ও যন্ত্রণা কমাতে সহায়ক।
- ঘিসমরিচ গ্রহণ: ঘিসমরিচে থাকা ক্যাপসাইসিন উপাদান প্রদাহনাশক। এটি পাইলসের ফোলা ও যন্ত্রণা কমাতে পারে।
- সজিনা খাওয়া: সজিনায় পরিপুষ্ট পরিমাণে ফাইবার থাকে। এটি মলদ্রাবক হিসেবে কাজ করে পাইলসের যন্ত্রণা কমাতে সাহায্য করে।
- শুকনা ডুমুর গ্রহণ: শুকনা ডুমুর এক ধরনের মলদ্রাবক যা পাইলসের যন্ত্রণা লাঘব করতে পারে।
- সুনিয়ন্ত্রিত রক্তচাপ বজায় রাখা: উচ্চ রক্তচাপ পাইলসের সমস্যা বৃদ্ধি করতে পারে। সুতরাং রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখা গুরুত্বপূর্ণ।
- শরীরচর্চা ও যোগাসন: যোগাসন ও শরীরচর্চা মলদ্রাবকতা বৃদ্ধি করে পাইলসের যন্ত্রণা লাঘব করতে পারে।
- ঠান্ডা বস্তু বসানো: ঠান্ডা বরফ প্যাকেটবা ঠান্ডা পানি দিয়ে বসানোর ফলে প্রদাহ ও ফোলা কমতে পারে।
- সর্বোপরি যথেষ্ট পরিমাণে পানি পান করা এবং রক্তাল্পতা এড়ানো বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
পাইলসের যন্ত্রণা দীর্ঘস্থায়ী হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
পায়েলসের চিকিৎসা কোথায় ভালো হয়
পাইলসের চিকিৎসা কোথায় ভাল হয় তা নির্ভর করে পাইলসের অবস্থা, প্রকৃতি এবং মারাত্মকতার উপর। তবে সাধারণভাবে নিম্নলিখিত জায়গাগুলোতে পাইলসের ভাল চিকিৎসা পাওয়া যায়:
বিশেষায়িত কোলন ও গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি বিভাগসমূহ: বড় আধুনিক হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজগুলোতে কোলন ও গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি বিভাগ থাকে যেখানে পাইলসের চিকিৎসায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা রয়েছেন।
প্রোক্টোলজি কেন্দ্রসমূহ: প্রোক্টোলজি বিশেষায়িত মেডিকেল কেন্দ্রগুলোতে পাইলস এবং অন্যান্য রক্তাল রোগের জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি থাকে।
পাইলস থেকে চিরতরে মুক্তির উপায় সার্জিক্যাল গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি বিভাগসমূহ: যেসব হাসপাতালে সার্জিক্যাল গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি বিভাগ আছে সেখানেও পাইলসের চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকে। এখানে পাইলসের শল্যচিকিৎসাও করা হয়।
বেসরকারি ক্লিনিকসমূহ: শহরাঞ্চলে বেসরকারি কিছু বিশেষায়িত ক্লিনিক রয়েছে যেখানে পাইলসের চিকিৎসা ভালভাবে করা হয়।
অবশ্যই পাইলসের চিকিৎসার জন্য অভিজ্ঞ ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত। উপযুক্ত চিকিৎসা এবং নির্দেশনা মেনে চলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
পাইলসের এলোপ্যাথিক ওষুধ
পাইলসের জন্য নিম্নলিখিত এলোপ্যাথিক ওষুধগুলি ব্যবহৃত হয়:
1. প্রদাহনাশক ওষুধ (Anti-inflammatory Drugs):
- স্টেরয়েড যেমন - হাইড্রোকোর্টিসন ক্রিম/মলম
- নন-স্টেরয়েড যেমন - আইবুপ্রোফেন, নেপ্রোক্সেন
2. বাতনাশক ওষুধ (Analgesics):
- পারাসিটামোল
- ট্রামাডোল
3. মলদ্রাবক ওষুধ (Laxatives):
- ফাইবার সাপ্লিমেন্ট যেমন - ইচ্ছিলিয়াম, প্লেনটাগো ওভেটা
- অসমাধিক মলদ্রাবক যেমন - লেসিথিন, ডোকিউসেট
4. টপিক্যাল ওষুধ (Topical Medications):
- লিডোকেইন জেল - প্রদাহ ও যন্ত্রণা কমায়
- নিট্রোগ্লাইসারিন ক্রিম - প্রদাহ কমায়
5. অন্যান্য:
- স্ক্লেরোথেরাপি - রক্তনালী শক্ত করে পাইলসের আকার কমায়
- বাটমাইনড - পাইলসের ডিমাইনটাইজড ব্যাক্টেরিয়া বাকিউলাস
প্রাথমিকভাবে চিকিত্সকগণ প্রদাহনাশক, বাতনাশক ও মলদ্রাবক ওষুধ নির্দেশ করেন। কিন্তু প্রয়োজনে উপরোক্ত অন্যান্য ওষুধগুলি ব্যবহার করা হয়। এলোপ্যাথিক ওষুধগুলি চিকিত্সকের পরামর্শে নির্দিষ্ট মাত্রায় গ্রহণ করা উচিত।
সচরাচর প্রশ্ন উত্তর
প্রশ্নঃ পাইলস হলে কি কি সমস্যা হতে পারে?
উত্তরঃ রক্তপাত পাইলসের প্রধান লক্ষণ হল অ্যানাল অঞ্চল বা মলদ্বারে রক্তপাত। এটি মাঝে মাঝে অথবা প্রতিবারই মলত্যাগের সময় দেখা যেতে পারে। যন্ত্রণা অস্বস্তি বাত রোগের ফলে অ্যানাল অঞ্চলে ব্যথা, জ্বালাপোড়া এবং চাপ অনুভূত হতে পারে। বসা বা চলাচলের সময় এই অসুবিধা বেশি হয়ে যায়।
প্রশ্নঃ চিরতরে পাইলস থেকে মুক্তি পাওয়া যায়?
উত্তরঃ ওষুধ চিকিত্সা প্রদাহনাশক, প্রশমক ও রক্তপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণকারী ওষুধ নিয়মিত সেবন করে পাইলসের উপসর্গ প্রশমিত করা যায়। তবে এটি সাময়িক সমাধান। লেজার বা আইআরটি চিকিৎসা পাইলসের অঞ্চলে লেজার বা রেডিও তরঙ্গ প্রয়োগ করে পাইলস উপশম করা যায়। এটি একটি কম-আক্রমণাত্মক চিকিৎসা পদ্ধতি।
প্রশ্নঃ পাইলস কতদিনে ভালো হয়?
উত্তরঃপাইলসের সময়কাল ও আরোগ্যলাভের সময় নির্ভর করে রোগীর অবস্থা, পাইলসের গুরুত্বর এবং চিকিত্সা পদ্ধতির উপর। জীবনযাত্রা পরিবর্তন (খাদ্যাভ্যাস, ব্যায়াম ইত্যাদি) এবং প্রদাহনাশক/প্রশমক ওষুধ সেবনের মাধ্যমে 1 সপ্তাহ থেকে 1 মাসের মধ্যে উপসর্গ প্রশমিত হতে পারে।প্রশ্নঃ
পাইলসের ব্যায়াম সম্বন্ধে জানুন
পাইলসের জন্য নিম্নলিখিত ব্যায়ামগুলি করা যেতে পারে:
- কেগেল ব্যায়াম: এই ব্যায়ামে পেলভিক মাংসপেশীগুলোকে শক্তিশালী করা হয়। এটি পাইলসের ফোলা ও যন্ত্রণা কমাতে সাহায্য করে।
- ব্রিজ ব্যায়াম: এই ব্যায়ামে নিতম্বের মাংসপেশীগুলো শক্তিশালী হয়। এটি পাইলসের চাপ কমাতে সহায়তা করে।
- নৈতিক চালসহ হাঁটা: নিয়মিত হাঁটাচলা মলদ্রাবকতা বৃদ্ধি করে যা পাইলসের সমস্যা কমায়। হাঁটার সময় নৈতিক চাল বজায় রাখলে নিতম্বের এলাকায় চাপ কমে।
- যোগাসন: ভুজঙ্গাসন, পশ্চিমোত্তানাসন, পবনমুক্তাসন ইত্যাদি যোগাসনগুলি মলত্যাগের সমস্যা দূর করতে সহায়ক।
- পিলেটস ব্যায়াম: পিলেটস ব্যায়ামে নিতম্ব এবং পেট এর মাংসপেশীগুলোকে শক্তিশালী করা হয়, যা পাইলসের চাপ ও ফোলা কমিয়ে আনতে পারে।
- সাইকেল চালানো: সাইকেল চালানোর সময় মাঝারি গতির ব্যায়াম মলত্যাগের সমস্যা দূর করতে পারে।
- গুরুত্বাকর্ষণ বিরোধী ব্যায়াম: এই ব্যায়ামে নিতম্ব এবং পেট এর মাংসপেশীগুলো শক্তিশালী হয়, ফলে পাইলসের চাপ কমে যায়।
নিয়মিত এই ব্যায়ামগুলি করলে পাইলসের লক্ষণগুলি অনেকাংশে কমে যেতে পারে। তবে চিকিত্সকের পরামর্শ নিয়ে এগুলি করা উচিত।
পাইলসের ঔষধ হোমিওপ্যাথিক
পাইলস থেকে চিরতরে মুক্তির উপায় হোমিওপ্যাথিক চিকিত্সায় পাইলসের জন্য নিম্নলিখিত কিছু প্রচলিত ওষুধ ব্যবহৃত হয়:
- এস্কুলাস হিপোকাস্টানাম (Aesculus Hippocastanum): এটি পাইলস এবং ভেনাস ব্লাড কাঙ্গালিয়ার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ হোমিওপ্যাথিক ওষুধ। পাইলসের ফোলা, প্রদাহ ও যন্ত্রণা কমাতে এটি কার্যকর।
- কালেনডুলা অফিসিনালিস (Calendula Officinalis): এটি পাইলসের প্রদাহ ও যন্ত্রণা কমাতে সাহায্য করে। রক্তক্ষরণ থেকে রক্ষা করতেও এটি কার্যকর।
- নাক্স ভমিকা (Nux Vomica): যদি পাইলসের সমস্যা কোষ্ঠকাঠিন্য এবং অতিরিক্ত পরিশ্রমের কারণে হয়, তাহলে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ।
- ভ্যারিক্স (Varix): পাইলসের জন্য বিশেষভাবে প্রস্তুতকৃত এই ওষুধটি পাইলসের ঘা, ফোলা ও যন্ত্রণা কমাতে সাহায্য করে।
- ব্যাপটিসিয়া টিংক্টোরিয়া (Baptisia Tinctoria): এটি রক্তপ্রবাহ বৃদ্ধি করে এবং পাইলসের যন্ত্রণা ও প্রদাহ কমায়।
- অ্যালোই (Aloe): এটি মলদ্রাবক উপাদান হিসেবে পাইলসের উপশমে সাহায্য করে।
- কলচিকাম (Colchicum): পাইলসের যন্ত্রণা এবং স্ফীতি কমাতে এটি ব্যবহৃত হয়।
আরো পড়ুনঃ বাসক পাতার রস খাওয়ার নিয়ম
হোমিওপ্যাথিক ওষুধগুলি চিকিৎসকের পরামর্শে গ্রহণ করা উচিত। কারণ রোগীর লক্ষণগুলি পর্যবেক্ষণ করে চিকিত্সকরাই সঠিক ওষুধ নির্বাচন করবেন। একই সাথে খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রার পরিবর্তন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কোন কোন খাবার খেলে পাইলস ভালো হয়
পাইলস থেকে চিরতরে মুক্তির উপায় পাইলসের সমস্যা কমাতে নিম্নলিখিত খাবারগুলি খেতে পারেন:
- ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার: গম, যব, বাজরা, সয়াবিন, ফলমূল, শাকসবজি ইত্যাদিতে ভরপুর পরিমাণ ফাইবার থাকে। এগুলো কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে পাইলসের সমস্যা কমায়।
- কলা: কলায় থাকা প্রাকৃতিক মলদ্রাবক উপাদান পাইলসের যন্ত্রণা লাঘব করতে সাহায্য করে।
- আঙ্গুর: আঙ্গুরে থাকা অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান পাইলসের প্রদাহ কমিয়ে আনে।
- লেবু: লেবুতে বিটামিন সি এবং অন্যান্য অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান থাকায় এটি পাইলসের যন্ত্রণা লাঘব করতে সাহায্য করে।
- সবুজ শাকসবজি: শাক, পুঁইশাক, লাউ, কচুশাক ইত্যাদিতে মলদ্রাবক ফাইবার থাকায় পাইলসের সমস্যা কমে।
- ডালিম: ডালিম মলদ্রাবক হওয়ায় পাইলসের লক্ষণগুলি কমাতে সাহায্য করে।
- শুকনা ডুমুর: শুকনা ডুমুর ভরপুর ফাইবারের উৎস হিসেবে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে পাইলসের সমস্যা লাঘব করে।
- ঘিসমরিচ ও হলুদ: দু'টিতেই অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান থাকায় প্রদাহ ও যন্ত্রণা কমে।
চিকিৎসকের পরামশ অনুযায়ী নিয়মিত এসব খাবার গ্রহণ করলে পাইলসের সমস্যা অনেকাংশে কমবে।
কোন কোন খাবার খেলে পাইলস বেড়ে যায়
নিম্নলিখিত কিছু খাবার খেলে পাইলসের সমস্যা বেড়ে যেতে পারে:
- চর্বিযুক্ত ও তেলাতেল খাবার: চিকেন, বার্গার, ফ্রাইড আইটেম, পিৎজা, চীজ ইত্যাদি খাবার থেকে বেশি চর্বি গ্রহণ করলে পাইলসের সমস্যা বাড়তে পারে।
- লবণাক্ত খাবার: চিপস, সোডিয়াম-ভরা প্রসেসড খাবার, লবণাক্ত নাশতা ইত্যাদির অধিক গ্রহণ পাইলস বাড়াতে পারে।
- মশলাযুক্ত তীব্র ও গরম খাবার: অতিরিক্ত গরম মশলা ব্যবহৃত খাবার, মসলাযুক্ত টক খাবার ইত্যাদি পাইলসের প্রদাহ বাড়াতে পারে।
- অ্যালকোহল: অ্যালকোহলিক পানীয় খাওয়া থেকে বেশি বিরত থাকা উচিত, কেননা এটি গ্যাস্ট্রিক এসিড বাড়ায় যা পাইলসের সমস্যা বৃদ্ধি করতে পারে।
- কফি: কফিতে থাকা ক্যাফেইন উপাদান পাইলসের উপসর্গগুলি বাড়াতে পারে।
- মিষ্টি জাতীয় খাবার: চিনি ও গুড়ের অতিরিক্ত গ্রহণ কোষ্ঠকাঠিন্য বৃদ্ধি করে পাইলসের সমস্যা বাড়াতে পারে।
- শুকনো মাংস ও লাল মাংস: এগুলি পরিপাকে কষ্ট দেয় এবং কঠিন মল গঠন করে পাইলসের সমস্যা বাড়াতে পারে।
অতএব পাইলস রোগীদের এই ধরনের খাবার সীমিত পরিমাণে গ্রহণ করা উচিত। পরিবর্তে ফাইবার ও প্রাকৃতিক খাবার গ্রহণ করা উচিত।
পাইলস হলে কি ডিম খাওয়া যাবে
হ্যাঁ, পাইলসের সময় মাঝারি পরিমাণে ডিম খাওয়া যেতে পারে। তবে কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে:
- ডিম খাওবেশি লবণ ও মশলা এড়িয়ে চলুন: ডিম রান্নায় বেশি লবণ বা গরম মশলা যোগ করবেন না। এতে পাইলসের প্রদাহ বৃদ্ধি পেতে পারে।
- ভালভাবে সিদ্ধ করুন: ডিম যাতে সম্পূর্ণ সিদ্ধ হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখুন। আধাসিদ্ধ ডিম পরিপাকে সমস্যা করতে পারে।
- পানি পর্যাপ্ত পান করুন: ডিম খেলে যথেষ্ট পরিমাণ পানি পান করুন। এতে কোষ্ঠকাঠিন্য এড়ানো যাবে।
- ডিম ছাড়াও ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করুন: শাক-সবজি, ফল, সবুজ ডাল, গম ইত্যাদি ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার খান।
অতিরিক্ত গরম মশলায়ুক্ত, চর্বিযুক্ত ও শুকনা ডিম বা ডিম খাওয়া উচিত নয়। দৈনন্দিন খাবারে মাঝারি পরিমাণে ডিম অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। তবে চিকিত্সকের পরামর্শ অনুসরণ করাই ভাল।
গরুর গোস্ত খেলে কি পাইলস বেড়ে যায়
হ্যাঁ, গরুর গোশত খেলে পাইলসের সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। কারণ গুলি নিম্নরূপ:
- কোষ্ঠকাঠিন্য: গোশতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকে কিন্তু ফাইবার নেই। ফাইবারের অভাবে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা হয়, যা পাইলসের উপসর্গকে বৃদ্ধি করে।
- প্রদাহ বৃদ্ধি: গরুর গোশত একটি সাধারণ এলার্জেন। এর কারণে শরীরে প্রদাহ বৃদ্ধি পেতে পারে যা পাইলসের যন্ত্রণা ও ফোলা বাড়াতে পারে।
- মলদ্রাবক গুণাবলীর অভাব: গোশতে কোন মলদ্রাবক উপাদান নেই। বরং এটি মলত্যাগের সমস্যা বৃদ্ধি করতে পারে।
- পরিপাক সমস্যা: গরুর গোশত কঠিনপাক খাবার। এর কারণে পরিপাকে বাধা সৃষ্টি হতে পারে যা পাইলসের লক্ষণগুলিকে আরও খারাপ করতে পারে।
- সংক্রমণের ঝুঁকি বৃদ্ধি: অপরিষ্কৃত বা অধিক রান্না করা গোশত খেলে সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে যা পাইলসের সমস্যাকে জটিল করতে পারে।
সুতরাং পাইলস রোগীদের সাধারণত গরুর গোশত খাওয়া থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়। তাদের উচিত সবুজ শাকসবজি, ডাল, ফল ইত্যাদি ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা।
পাইলস এর ঘরোয়া চিকিৎসা
- পাইলসের জন্য নিম্নলিখিত কিছু ঘরোয়া চিকিৎসা অনুসরণ করা যেতে পারে:
- সীতকরী প্রলেপ: আলু বা কাঁচা কলার রস এবং সরিষার তেলে ভিজিয়ে স্পঞ্জ তৈরি করে রক্তাল এলাকায় প্রলেপ দিলে প্রদাহ ও যন্ত্রণা কমে।
- লেবুর রস: লেবুর রসে ভিজানো কাপড় প্রলেপ দিলে প্রদাহ ও যন্ত্রণা কমে। লেবুর ভিটামিন-সি প্রদাহনাশক।
- শুঁটকির খোসা: শুঁটকির খোসার অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি গুণ রয়েছে। শুঁটকির ডুবানো পানিতে বসে থাকা যায়।
- মোরিঙ্গা বা সজিনা পাতা: এগুলোর রস খেলে মলদ্রাবক গুণ থাকায় কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়।
- ইচ্ছিলিয়াম গম: ইচ্ছিলিয়ামের পানিতে সিদ্ধ গম খেলে পাইলসের ফোলা কমে।
- অ্যালোভেরা জেল: অ্যালোভেরা জেলটি তাপ-প্রদাহনাশক হওয়ায় প্রলেপ দিলে যন্ত্রণা কমে।
- চামচিকা: চামচিকায় অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং প্রদাহনাশক গুণ থাকে।
- শুকনা আঙ্গুর: শুকনা আঙ্গুর খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে ও মলনালী শক্ত করে।
- কলার রস: মলদ্রাবক এবং প্রদাহনাশক গুণ থাকায় পাইলসের উপকারে আসে।
- আদা: আদা অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি গুণ সম্পন্ন হওয়ায় প্রদাহ ও যন্ত্রণা লাঘব করে।
আরো পড়ুনঃ ১০ হাজার টাকায় ২৫ টি ব্যবসার আইডিয়া
এছাড়াও যথেষ্ট পানি পান, শরীর চর্চা ও খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করলে ঘরোয়া পদ্ধতিতে পাইলসের সমস্যা কমানো সম্ভব। তবে অতিরিক্ত সমস্যার সময় চিকিত্সকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
লেখকের মন্তব্য
পাইলস থেকে চিরতরে মুক্তির উপায় জেনে নিন আমার এই পোস্টটিতে আমি পাইলস থেকে
কিভাবে কিভাবে মুক্তি পাবেন বিস্তারিত আলোচনা করেছি। কিছু উপকৃত হবেন
পাইলসের ঘরোয়া চিকিৎসা আপনারা যদি করতে পারেন তাহলে অবশ্যই উপকৃত হবেন। আমরা
পাইলসের জন্য অনেক কষ্ট করে থাকি।
প্রিয় পাঠক আশা করি আপনি আমার এই পোস্টটি পড়ে জানতে পেরেছেন পাইলস থেকে কিভাবে মুক্তি পাওয়া যায় । পাইলস একটা মারাত্মক রোগ এই রোগে আমরা অনেকেই ভুক্তভোগী । আসুন জেনে খুব সহজে কিভাবে পারিস থেকে মুক্তি পাওয়া যায় আমি কিছু ঘরও উপায় আপনাদের কাছে আলোচনা করেছি এবং বিস্তারিত বলেছি। আশা করি আমার এই পোস্টটি পড়ে আপনি উপকৃত হবেন আপনি উপকৃত হলে আপনার বন্ধুদের কাছে অবশ্যই শেয়ার করে দিবেন ধন্যবাদ।
বিডি অনলাইন স্মার্ট এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url