ওজন কমাতে চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম ওজন কমানোর জন্য আমরা কতইনা মেডিসিন নিয়ে
থাকি বা এটা সেটা অনেক কিছুই খেয়ে থাকি আসুন জেনে নেই । ওজন কমাতে চিয়া
সিড কিভাবে খেতে হয় ও গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা।
আমরা মোটা স্বাস্থ্য নিয়ে কিন্তু অনেক চিন্তিত আমরা অনেক কিছু ট্রাই
করে থাকি শুধুমাত্র ওজন কমানোর জন্য । কিন্তু আমরা কি জানি যে চিয়া সিডদিয়ে ওজন কমানো যায় । আসুন
জেনে নেই কিভাবে আপনি ওজন কমাবেন নিচে তা তুলে ধরেছি আপনি আমার এই পোস্টটি করলে
জানতে পারবেন।
পেটের যন্ত্রণা এবং অসুস্থতা চিয়া সিড অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া হলে পেট খারাপ
হতে পারে, বমি বমি অনুভূতি, পেটব্যথা এবং ডায়রিয়া হতে পারে। কোষ্ঠকাঠিন্য
চিয়া সিডে থাকা শক্ত ফাইবারের কারণে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
উপরিউক্ত হজমসমস্যা চিয়া সিডের জটিল ফাইবারের কারণে খাদ্যগ্রহণ ও হজম
প্রক্রিয়াটি বাধাগ্রস্থ হতে পারে।
গ্যাসের সমস্যা চিয়া সিডে থাকা কার্বোহাইড্রেটের কারণে গ্যাস এবং বায়ু তৈরি হতে
পারে যা অস্বস্তিকর হতে পারে। এলার্জি কোন ব্যক্তি যদি চিয়া সিডের প্রতি
এলার্জিক হন তাহলে শরীরে এলার্জির লক্ষণ দেখা দিতে পারে। সুতরাং চিয়া সিড
স্বাস্থ্যের জন্য ভালো না হলেও খুব বেশি খেলে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।
তাই পরিমিত মাত্রায় খাওয়াই উচিত।
ওজন কমাতে চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম
ওজন কমাতে চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম গুলো নিচে দেওয়া হল আপনারা
যেভাবে চিয়া সিড খেলে দ্রুত ওজন কমাতে পারবেন। সেই সম্পর্কে আপনাদের
সামনে তুলে ধরেছি আশা করি এই রকম ভাবে খুব সহজে ওজন কমাতে পারবেন। পরিমাণ
নির্ধারণ প্রতিদিন ১-২ চামচ চিয়া সিড খাওয়া উচিত। বেশি পরিমাণে গ্রহণ করলে
পেটের সমস্যা, গ্যাস, বমি বমি ভাব হতে পারে।
পানি পান করা চিয়া সিড খাওয়ার পর প্রচুর পরিমাণ পানি পান করতে হবে। এটি
শরীরকে পরিপাক প্রক্রিয়ায় সহায়তা করবে। সময় বিন্যাস চিয়া সিড খাওয়ার সময়
বিন্যস্ত করা ভালো। সকালে এবং রাতে খাওয়া যেতে পারে। খাওয়ার আগে ও পরে পানি
পান করতে হবে। ধীরে ধীরে শুরু করা চিয়া সিড খাওয়া শুরু করলে প্রথমে খুব কম
পরিমাণে শুরু করতে হবে যাতে শরীর অভ্যস্ত হয়।
ব্যায়াম করা চিয়া সিডের সাথে নিয়মিত ব্যায়াম করলে ওজন কমানোর প্রক্রিয়াটি
আরও দ্রুত হবে।পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ চিয়া সিড গ্রহণের সাথে সাথে পুষ্টিকর এবং
কম ক্যালরির খাবার গ্রহণ করতে হবে প্রতিনিদ্রশীল খাবার পরিহার করা চিনি,
চর্বিযুক্ত ও প্রক্রিয়াজাতকৃত খাবার পরিহার করতে হবে। সুতরাং নিয়মটি মেনে চলা
এবং ধৈর্য্য ধরে রাখা গুরুত্বপূর্ণ। চিয়া সিড ওজন কমানোর একটি সহায়ক তবে একার
ভরসা না করে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গ্রহণ করাই ভালো।
চিয়া সিড কতক্ষণ ভিজিয়ে রাখতে হয়
ওজন কমাতে চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম চিয়া সিড ভিজিয়ে রাখার সময়কাল নির্ভর
করে তার উদ্দেশ্য ও পরিমাণের উপর। তবে সাধারণভাবে চিয়া সিড ভিজানোর জন্য
নিম্নলিখিত সময়সীমা অনুসরণ করা যেতে পারেঃ
ছোট পরিমাণ চিয়া সিড ১/৪ কাপ পর্যন্ত ৪-৬ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখুন।
মাঝারি পরিমাণ চিয়া সিড ১/২ কাপ ৬-৮ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখুন।
বেশি পরিমাণ চিয়া সিড ১ কাপ বা তারও বেশি ৮-১২ ঘন্টা ভিজিয়ে
রাখুন।
তবে মনে রাখতে হবে, চিয়া সিড যত বেশি সময় ভিজানো হবে, তত বেশি ফুলে
উঠবে এবং সেভাবেই পাকানো সহজ হবে।
ভিজানোর সময়টা অনেকাংশে বাতাসের তাপমাত্রা ও আর্দ্রতার উপরও নির্ভর করে। গরম
ও শুষ্ক আবহাওয়ায় চিয়া সিড দ্রুত শুকিয়ে যায়, সেক্ষেত্রে কম সময় ভিজানো
যথেষ্ট। আর ঠান্ডা ও আর্দ্র আবহাওয়ায় অধিক সময় ভিজানো প্রয়োজন হতে পারে।
সর্বোপরি, চিয়া সিডের পরিমাণ এবং আপনার পছন্দ অনুযায়ী ফুলে উঠা এবং নরম
হওয়ার জন্য উপযুক্ত সময় নির্ধারণ করা উচিত।
চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা
চিয়া সিড খাওয়ার বিভিন্ন উপকারিতা রয়েছে। আমরা সাধারণত ওজন কমানোর জন্য যে
এসিড খেয়ে থাকি গ্যাস ভালো করার জন্য যে এসিড খেয়ে থাকি এবং শরীরে বিভিন্ন
রোগের জন্য আমরা চিয়া সিড খেয়ে থাকি । বলে শেষ করা যাবে না নিম্নোক্ত
কারণগুলির জন্য চিয়া সিড খাওয়া স্বাস্থ্যকর:
ফাইবার সমৃদ্ধ: চিয়া সিডে প্রচুর পরিমাণে সলুলেবল ও অন্যান্য
স্বাস্থ্যকর ফাইবার রয়েছে যা পরিপাক প্রক্রিয়াকে সহজ করে এবং
কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ করে।
ওজন নিয়ন্ত্রণ: ফাইবারসমৃদ্ধ হওয়ায় চিয়া সিড খেলে দীর্ঘক্ষণ পেটের
ভরটি থাকে, ফলে অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণের প্রবণতা কমে।
রক্তশর্করা নিয়ন্ত্রণ: চিয়া সিডে থাকা উচ্চ-মানের ফাইবার ইনসুলিন
উত্পাদন নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে এবং রক্তশর্করার মাত্রা স্থিতিশীল
রাখে।
হার্ট স্বাস্থ্য: চিয়া সিড কোলেস্টেরল কমায়, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে
এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমিয়ে থাকে।
এন্টি-অকসিডেন্ট গুণাবলি: চিয়া সিডে এন্টি-অকসিডেন্ট রয়েছে যা শরীরকে
ক্ষতিকর মুক্ত রেডিকেল থেকে রক্ষা করে।
পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ: চিয়া সিডে রয়েছে প্রোটিন, ভিটামিন, খনিজ লবণ যা
শরীরের প্রয়োজনীয়।
একটি ভালো ত্রিফলা উৎস: চিয়া সিড গ্রহণ করলে শরীরে প্রয়োজনীয় ওমেগা ৩
এর অভাব পূরণ হয়।
তাই দেখা যাচ্ছে, পরিমিত মাত্রায় চিয়া সিড খাওয়া শরীরের জন্য খুবই উপকারী
এবং বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
চিয়া সিড খাওয়ার অপকারিতা
চিয়া সিড খাওয়ার কিছু অপকারিতা বা ক্ষতিকর দিক রয়েছে তেমন এর খারাপ দিকে
রয়েছে খারাপ দিকগুলো আপনারা জেনে নিন । চিয়া সিড যেমন শরীরের জন্য উপকার
যেমন:
পেট ফাপা গ্যাস সমস্যা: চিয়া সিডের উচ্চ ফাইবার কন্টেন্টের কারণে পেটে
গ্যাস জমা হওয়া, পেট ফাপানো এবং অসুস্থতার সমস্যা দেখা দিতে পারে।
ডায়রিয়া: চিয়া সিডে থাকা অতিরিক্ত ফাইবারের কারণে ডায়রিয়ার সমস্যা
হতে পারে, বিশেষত যদি প্রথমবারের মত বেশি পরিমাণে খাওয়া হয়।
কোষ্ঠকাঠিন্য: কিছু ক্ষেত্রে, চিয়া সিডের উচ্চ ফাইবার কন্টেন্ট শরীরে
পানির অভাব সৃষ্টি করে কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণ হতে পারে।
এলার্জি: কিছু লোকের চিয়া সিডের প্রতি এলার্জি থাকতে পারে যার ফলে দেখা
দিতে পারে ফুলে যাওয়া, চোখ লাল হওয়া, চর্ম প্রদাহ ইত্যাদি।
উপসর্গ প্রকোপ: চিয়া সিড গ্যাস্ট্রিক এসিড বৃদ্ধি করে, যার ফলে
অ্যাসিডিটি, পেট জ্বালা বা গ্যাসের সমস্যা বাড়তে পারে।
পুষ্টি শোষণ বাধাগ্রস্ত: চিয়া সিডের উচ্চ ফাইবার কন্টেন্ট খাদ্য থেকে
কিছু গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টির শোষণকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।
পাথর গঠন: চিয়া সিড মূত্রথলীতে অ্যাক্সালেট পাথর গঠনের ঝুঁকি বৃদ্ধি
করতে পারে।
সুতরাং চিয়া সিড খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন এবং পরিমিত পরিমাণে গ্রহণ
করা গুরুত্বপূর্ণ। অতিরিক্ত পরিমাণে গ্রহণ করলে উপরোক্ত সমস্যাগুলি দেখা দিতে
পারে।
চিয়া সিড খাওয়ার সময়
চিয়া সিড খাওয়ার জন্য কোনো নির্দিষ্ট সময় নেই। তবে কিছু পরামর্শ অনুসরণ
করলে চিয়া সিড খাওয়া আরও উপকারী হবে:
সকালে খালিপেটে: সকালে খালি পেটে চিয়া সিড খেলে দিনের শুরুতেই ফাইবার
পাওয়া যায়, যা কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে এবং পরিপাক প্রক্রিয়াকে সহজ করে।
খাবারের আগে: প্রধান খাবারের আধা ঘণ্টা আগে চিয়া সিড খেলে পেটের ভরটি
থাকে, ফলে অতিরিক্ত খাবার খাওয়া হয় না।
রাতে: রাতে চিয়া সিড খেলে রাতভর জীর্ণ প্রক্রিয়া চলতে থাকে। এতে ওজন
নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য পাওয়া যায়।
পানির সাথে: চিয়া সিড খাওয়ার পর অনেক পানি পান করা উচিত। এতে পরিপাক
প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে।
খাবারের মধ্যে: রান্না করা খাবারের সাথে চিয়া সিড মিশিয়ে খেলেও
ফাইবার চাহিদা মিটে।
নাস্তার সময়: দুপুরের নাস্তার সময় একটু চিয়া সিড খাওয়া যেতে পারে।
এতে দিন ভর পেটের ভরটি থাকে।
পানীয়: চিয়া সিডের জুস বানিয়ে পান করাও যায়। তবে পরিমাণ খেয়াল
রাখতে হবে।
সর্বোপরি, চিয়া সিড মাত্রাতিরিক্ত খাওয়া উচিত নয়। দৈনিক ১-২ চামচ পর্যন্ত
খাওয়া যেতে পারে। খাওয়ার সময় এবং পরিমাণ ব্যক্তিগত প্রয়োজন ও অভ্যাস
অনুযায়ী নির্বাচন করা উচিত।
গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম
গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম এই সময় চিয়া সিড খাওয়া খুবই
ভালো। কিন্তু সাবধানতার সাথে খেতে হবে পরিমাণ মতো খেতে হবে অতিরিক্ত মাত্রায়
খাওয়া যাবেনা দেখে নিন আপনি কিভাবে গর্ভাবস্থায় চিয়া
সিড খাবেন।
পরিমাণ সীমিত রাখুন গর্ভাবস্থায় প্রতিদিন ১-২ চামচ চিয়া সিড খাওয়া নিরাপদ
বলে গণ্য করা হয়। বেশি পরিমাণে খেলে গ্যাস, বমি-বমি ভাব এবং পেটের অসুবিধা
হতে পারে। ভিজিয়ে খান চিয়া সিডগুলি রাতভর ভিজিয়ে রেখে পরদিন খাওয়া উচিত।
এতে ভালোভাবে ফুলে উঠবে এবং পরিপাক সহজ হবে।
পানি পর্যাপ্ত পান করুন চিয়া সিড খাওয়ার পরপরই প্রচুর পরিমাণ পানি পান করতে
হবে। এটি পরিপাকে সহায়তা করবে। ক্রমশ বাড়িয়ে নিন শুরুতে খুব কম পরিমাণে
চিয়া সিড খান এবং ক্রমে আপনার শরীর অভ্যস্ত হলে পরিমাণ বাড়াতে পারেন।
অন্যান্য লক্ষণ খেয়াল রাখুন গ্যাস, বমি-বমি ভাব বা পেটের অসুবিধা বোধ করলে
চিয়া সিড খাওয়া বন্ধ করে দিন।
সময়মত পরীক্ষা করান নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে রাখুন যাতে কোন সমস্যা না
থাকে তা নিশ্চিত করা যায়। সর্বোপরি, গর্ভাবস্থায় সতর্কতা অবলম্বন করা
জরুরি। সব রকম খাদ্য গ্রহণের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
চিয়া সিড কিডনির জন্য কতটা ভাল
ওজন কমাতে চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম চিয়া সিড কিডনির জন্য কিছুটা ভালো
এবং কিছুটা খারাপও হতে পারে। এর সুবিধা ও অসুবিধাগুলি নিম্নরূপঃ
সুবিধাঃ
ডায়উরেটিক গুণ: চিয়া সিডে থাকা উচ্চ ফাইবার শরীরের প্রার্থিক পানি বের
করে দিতে সাহায্য করে, যা কিডনির চাপ কমায়।
রক্তশর্করা নিয়ন্ত্রণ: চিয়া সিডের ফাইবার ইনসুলিন প্রতিক্রিয়াকে ভালো
রাখে, যা ডায়াবেটিস থেকে কিডনিকে রক্ষা করে।
সংক্রমণ প্রতিরোধ: চিয়া সিডের এন্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং এন্টি-ফানগাল গুণ
কিডনি সংক্রমণ প্রতিরোধ করে।
অতিরিক্ত ওমেগা-৩: কিডনি রোগীদের জন্য চিয়া সিডের উচ্চ ওমেগা-৩
অ্যালফা-লিনোলেনিক আমল ক্ষতিকর হতে পারে।
অক্সালেট যুক্ত: চিয়া সিডে উচ্চ অক্সালেট রয়েছে, যা কিডনি পাথর গঠনের
ঝুঁকি বাড়ায়।
অতিরিক্ত পুষ্টি নিয়ন্ত্রণে বাধা: কিডনি রোগীদের জন্য অতিরিক্ত ফাইবার
পুষ্টি শোষণে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
গ্রেসস, সতর্কতা অবলম্বন করলে এবং পরিমিত পরিমাণে গ্রহণ করলে চিয়া সিড
কিডনির জন্য উপকারী হতে পারে। তবে কিডনি রোগীদের জন্য চিকিত্সকের পরামর্শ
অনুসরণ করা প্রয়োজন।
রক্তশর্করা নিয়ন্ত্রণ চিয়া সিড
চিয়া সিড রক্তশর্করা নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি
নিম্নোক্ত কারণগুলির জন্য রক্তশর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করেঃ
উচ্চ ফাইবার সমৃদ্ধ চিয়া সিডে প্রচুর পরিমাণ সলুনেবল এবং অন্যান্য
ফাইবার রয়েছে। এই ফাইবারগুলি খাদ্য গ্রহণ এবং শর্করা শোষণের গতি কমিয়ে
দেয়, ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল থাকে। ইনসুলিন সহনশীলতা
বৃদ্ধি চিয়া সিডের উচ্চ আল্ফা-লিনোলেনিক আমল এবং লিগন্যান শরীরের
ইনসুলিন সহনশীলতা বৃদ্ধি করে। এতে ইনসুলিন কার্যকরভাবে শর্করা নিয়ন্ত্রণ
করতে সক্ষম হয়।
ডায়াবেটিক কম্পলিকেশন নিয়ন্ত্রণ চিয়া সিডে থাকা এন্টিঅকসিডেন্ট এবং
এন্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান ডায়াবেটিসের বিভিন্ন জটিলতা যেমন
নেফ্রোপ্যাথি, নিউরোপ্যাথি, রেটিনোপ্যাথি ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য
করে। আমলবৃদ্ধির গতি কমানো চিয়া সিডে থাকা উচ্চ ফাইবার ও অন্যান্য উপাদান
রক্তে আমলবৃদ্ধির গতি কমিয়ে দেয়, যা রক্তশর্করা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
ওজন কমাতে চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম পাইলগ্লাইসেমিক ইনডেক্স নিম্ন
চিয়া সিডের পাইলগ্লাইসেমিক ইনডেক্স অর্থাৎ রক্তে শর্করার স্তর বৃদ্ধির
মাত্রা খুবই নিম্ন। অতএব, পরিমিত পরিমাণে চিয়া সিড খেলে রক্তশর্করার মাত্রা
নিয়ন্ত্রণে এবং ডায়াবেটিস প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তবে
এর অতিরিক্ত গ্রহণ পরিহার করা উচিত।
চিয়া সিড দিয়ে রূপচর্চা করব কিভাবে
চিয়া সিড রূপচর্চার ক্ষেত্রেও বিভিন্ন উপকারিতা রয়েছে। নিম্নলিখিত উপায়ে
চিয়া সিড ব্যবহার করা যেতে পারেঃ
চিয়া সিড জল চিয়া সিড ওয়াটার
ওজন কমাতে চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম চিয়া সিড জল বা চিয়া সিড
ওয়াটার বানানোর প্রক্রিয়াটি খুবই সহজ। এটি বানাতে নিম্নলিখিত পদ্ধতিগুলি
অনুসরণ করা যায়:
উপকরণ:
- চিয়া সিড (প্রয়োজনমত পরিমাণ)
- পানি
- কোনো জার/বাটি
প্রণালী:
প্রথমে চিয়া সিডগুলি খুব ভালোভাবে ধুয়ে নিন এবং একটি জার বাটিতে রাখুন।
এরপর জারে প্রয়োজনমত পরিমাণে পানি ঢেলে দিন। সাধারণত ১ কাপ চিয়া সিডের
জন্য ১-২ কাপ পানি লাগে। জারটি ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দিন এবং রাত্রিভর বা
কমপক্ষে ৬-৮ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখুন।
পরদিন সকালে জারের ঢাকনা খুলে দেখুন চিয়া সিডগুলি ফুলে উঠেছে এবং পানিতে
একটা গাঢ় রঙের তরল তৈরি হয়েছে, এটাই চিয়া সিড জল। এখন একটি ছাঁকনি বা
কাপড়ের মাধ্যমে চিয়া সিডগুলি আলাদা করে নিন এবং তরলটি আলাদা একটি জারে
ঢেলে নিন। চিয়া সিড ওয়াটার ঠাণ্ডা করে পান করুন অথবা বরফ দিয়েও খেতে
পারেন। ইচ্ছে করলে কিছু নেভারা/লেবুর রস মিশিয়ে স্বাদ বাড়াতে পারেন।
চিয়া সিড ওয়াটার প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, এন্টিঅকসিডেন্ট এবং পুষ্টিগুণ
সমৃদ্ধ। এটি শরীরের টক্সিন বের করে দিতে এবং পরিপাক প্রক্রিয়াকে সহজ করতে
সাহায্য করে। অতএব নিয়মিত গ্রহণ করা স্বাস্থ্যের পক্ষে উপকারী।
চিয়া সিড মাস্ক কিভাবে বানাবো
চিয়া সিড মাস্ক বানানোর প্রক্রিয়াটি খুবই সহজ। এটি ত্বকের ময়লা ও মৃত
কোষগুলি সরিয়ে ত্বককে পরিষ্কার এবং উজ্জ্বল করে তোলে। নিম্নোক্ত উপায়ে
চিয়া সিড মাস্ক বানানো যায়:
উপকরণ:
- 2 টেবিল চামচ চিয়া সিড
- 1 টেবিল চামচ গোলাপজল/পানি
- 1 চা চামচ মধু (ইচ্ছামত)
- 1 চা চামচ দই (ইচ্ছামত)
প্রণালী:
প্রথমে চিয়া সিডগুলিকে একটা হাতে পিঁধে বা ব্লেন্ডারে গুঁড়িয়ে গুঁড়ো
করে নিন। এরপর এই চিয়া সিড গুঁড়াটিকে একটি বাটিতে নিয়ে সেখানে
গোলাপজল/পানি যোগ করুন। এখন মধু এবং অথবা দই যোগ করুন (ইচ্ছামত)। দই যোগ
করলে মাস্কটি আরও ময়শ্চরিত হয়ে ত্বককে নরম করতে সাহায্য করবে।
সবগুলি উপকরণ ভালোভাবে মিশিয়ে নিন যাতে একটি ঘন এবং একসঙ্গে বেঁধে যাওয়া
জায়গায় মাস্ক তৈরি হয়। এই মাস্কটি পরিষ্কার ত্বকে প্রলেপ করুন এবং 15-20
মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর শুকনো চিয়া সিড দিয়ে ত্বক মসৃণ করুন। মসৃণের
সময় চিয়া সিডের শক্ত এক্সফ্যালিয়েটরি প্রভাব মৃত কোষগুলি দূর করতে
সাহায্য করবে।
শেষে ত্বক ধুয়ে নিন এবং মসৃণকারী ক্রিম লোশন প্রয়োগ করুন। এভাবে আপনি
নিয়মিত চিয়া সিড মাস্ক প্রয়োগ করতে পারেন। এটি ত্বকের নৈসর্গিক চকচকে
সৌন্দর্য বজায় রাখতে সহায়তা করবে।
চিয়া সিড বডি স্ক্রাব
চিয়া সিড, সাদা চিনি এবং অলিভ তেলের একটি মিশ্রণ বানিয়ে শরীরে লাগালে এটি
একটি বডি স্ক্রাব হিসেবে কাজ করে। এতে মৃত ত্বক কোষ দূর হয় এবং ত্বক নরম ও
চকচকে হয়।
চিয়া সিড হেয়ার প্যাক
চিয়া সিড হেয়ার প্যাক চুলের স্বাস্থ্য ও সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে বিশেষভাবে
কার্যকরী। এটি প্রাকৃতিক উপায়ে চুলকে শক্ত, চকচকে এবং জীবন্ত করে তোলে।
নিম্নলিখিত উপায়ে চিয়া সিড হেয়ার প্যাক তৈরি করা যায়:
উপকরণ:
টেবিল চামচ চিয়া সিড
টেবিল চামচ বেকিং সোডা
1/2 কাপ দই
2 টেবিল চামচ শেষুর তেল
প্রণালী:
প্রথমে চিয়া সিডগুলিকে একটু পিসে বা ব্লেন্ডারে গুঁড়িয়ে গুঁড়ো করে
নিন।
এরপর এক বাটিতে সব উপকরণগুলি মিশিয়ে একটি ঘন এবং একসঙ্গে বেঁধে যাওয়া
প্যাক তৈরি করুন।
এই প্যাকটি চুলের গোড়ায় থেকে শুরু করে শেষ অবধি মাথার সমস্ত চুলে
লাগিয়ে দিন।
লাগানোর পর এক কাপড় বা সুতির টুপি দিয়ে মাথা ঢেকে দিন এবং 30-45
মিনিট অপেক্ষা করুন।
অপেক্ষার পর গরম পানি দিয়ে চুল ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন।
শেষে শ্যাম্পু-কন্ডিশনার দিয়ে স্বাভাবিকভাবে চুল ধুয়ে নিন।
চিয়া সিড হেয়ার প্যাক এর উপকারিতা:
চিয়া সিডের প্রোটিন এবং ফাইবার চুলকে শক্ত করে তোলে।
বেকিং সোডার প্রভাব চুল থেকে তৈল ও আবর্জনা দূর করে।
দই এবং শেষুর তেল চুলকে আর্দ্র এবং জীবন্ত রাখতে সাহায্য করে।
এন্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ফ্যাংগাল গুণাবলী চুল পতন রোধ করে।
তাই চিয়া সিড হেয়ার প্যাকটি নিয়মিত ব্যবহার করলে চুলের স্বাস্থ্য ও
সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে।
চিয়া সিড টি
চিয়া সিড টি একটি খুবই স্বাস্থ্যকর এবং পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ পানীয়। এটি
বানানো সহজ এবং অনেক উপকারিতা রয়েছে। চিয়া সিড টি বানানোর প্রক্রিয়াটি
নিম্নরূপ:
উপকরণ:
1 টেবিল চামচ চিয়া সিড
1 কাপ গরম পানি
লেবু/মধু/গুড় (ইচ্ছামত)
প্রণালী:
সর্বপ্রথম চিয়া সিডগুলিকে ভালোভাবে ধুয়ে নিন।
এরপর একটি চা কাপে/মাগে চিয়া সিডগুলি রাখুন।
এখন গরম পানি ঢেলে দিন এবং 5-10 মিনিট ভিজতে দিন।
অপেক্ষার পর চা ছাঁকনি দিয়ে ছাঁকুন যাতে কেবলমাত্র চিয়া সিডের তরল
অংশই পাওয়া যায়।
এখন ইচ্ছামত লেবু রস, মধু বা গুড় যোগ করুন। আরও স্বাদ বাড়ানোর জন্য
দারুচিনি, এলাচ বা অন্য মসলা যোগ করতে পারেন।
সরবত করে গরম বা ঠাণ্ডা উভয়ভাবেই পান করা যায়।
চিয়া সিড টির উপকারিতা
উচ্চ মাত্রায় ফাইবার সমৃদ্ধ, যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ, যা হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়ক।
এন্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ, যা শরীরকে ক্ষতিকারক মুক্ত রেডিকেল থেকে রক্ষা
করে।
আমিষ রোগ প্রতিরোধে সহায়ক।
কিডনি এবং লিভারের কার্যক্রম উন্নত করে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
হজম ক্রিয়াকে সহজ করে।
এভাবে দেখা যায়, চিয়া সিড টি একটি স্বাস্থ্যকর পানীয় হিসেবে নিয়মিত
পানাহারে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। এটি বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা
প্রতিরোধ এবং সামগ্রিক শারীরিক কল্যাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
চিয়া সিড মধু দিয়ে খাওয়ার নিয়ম
চিয়া সিড মধু দিয়ে খাওয়ার কিছু নিয়ম এখানে তুলে ধরছি মধু সংগ্রহ প্রথমেই
ভালো মানের নৈসর্গিক মধু সংগ্রহ করুন। কোনো রকম মিশ্রিত বা সংরক্ষিত মধু
এড়িয়ে চলুন। পরিমাণ প্রতি ১ চামচ চিয়া সিডের জন্য ১/২ থেকে ১ চামচ মধু
যথেষ্ট হবে। খেয়ালী মতো মধুর পরিমাণ বাড়াতে পারবেন।
উপাদান মিশ্রণ চিয়া সিডগুলো এক পাত্রে নিয়ে মধু ওপর দিয়ে ভালোভাবে
নেড়েচেড়ে মিশিয়ে নিন। যাতে সিডগুলোর ওপর মধু ছড়িয়ে পড়ে। ভিজানো
মিশ্রণটি অন্তত ১ ঘন্টা অথবা তার বেশি সময় ধরে রেখে দিন যাতে চিয়া সিডগুলো
মধু শুষে নিতে পারে।
সংরক্ষণ মিশ্রণটিকে একটি বাটিতে বা বাক্সে রেখে দিন। শান্ত এবং ঠান্ডা
জায়গায় সংরক্ষণ করলে অনেকদিন থাকবে। খাওয়ার নিয়ম খাওয়ার সময় ১ থেকে ২
চামচ মধুযুক্ত চিয়া সিড খেতে পারেন। পরিমিত খাওয়া জরুরি। পানি চিয়া সিড
খাওয়ার পর কিছুক্ষণ পর গরম অথবা ঠান্ডা পানি পান করুন। এটি পরিপাকে সহায়তা
করবে। চিয়া সিড মধু দিয়ে খেলে শরীরে শক্তি ও প্রাণশক্তি বৃদ্ধি পায়। তবে
অতিরিক্ত খেলে সমস্যা হতে পারে বলে পরিমিত খাওয়া প্রয়োজন।
সকালে খালি পেটে চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা
সকালে খালি পেটে চিয়া সিড খাওয়ার বিভিন্ন উপকারিতা রয়েছে পাচনশক্তি বৃদ্ধি
চিয়া সিডে থাকা ফাইবার পাচনতন্ত্রকে সক্রিয় রাখতে সাহায্য করে। খালি পেটে
খেলে এটি পাচনক্রিয়াকে সহজ করে রক্তশর্করা নিয়ন্ত্রণ চিয়া সিডের ভিতরের
জেলেটিনি অংশ রক্তশর্করার মাত্রা স্থিতিশীল রাখতে সহায়তা করে। সকালে খেলে
সারাদিনের রক্তশর্করা নিয়ন্ত্রণে থাকে।
ওজন নিয়ন্ত্রণ চিয়া সিডে থাকা ফাইবার পরিপূর্ণতার অনুভূতি দেয় এবং ক্ষুধা
কমিয়ে দেয়। ফলে খাবারের পরিমাণ কমিয়ে ওজন নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সরবরাহ চিয়া সিডে থাকে ভিটামিন সি, ভিটামিন ই এবং
অন্যান্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা শরীরকে টকসিন থেকে মুক্ত রাখতে সাহায্য করে।
ত্বক পরিচর্যা চিয়া সিডে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ন্যূট্রিশনগুলো ত্বককে
সুস্থ ও উজ্জ্বল রাখতে সহায়তা করে। শক্তি সরবরাহ চিয়া সিডে থাকা প্রোটিন,
কার্বোহাইড্রেট ও ফাইবার শরীরকে স্থায়ী শক্তি যোগায়। সকালে খালি পেটে
খাওয়ায় দিনভর সেই শক্তি থাকে তাই সকালে খালি পেটে চিয়া সিড খাওয়া
স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। তবে অতিরিক্ত না খেয়ে পরিমিত পরিমাণ খাওয়া
উচিত।
লেখকের মন্তব্য
ওজন কমাতে চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম ও গর্ব অবস্থায় চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা
সম্পর্কে আজকে আমার এই পোস্টটিতে আমি তুলে ধরেছি। আপনারা আমার এই পোস্টটি পড়লে
জানতে পারবেন কিভাবে ওজন কমাতে পারবেন ও কিভাবে রূপচর্চা করতে পারবেন । কিভাবে
আপনি সুস্থ থাকতে পারবেন চিয়া সিড দিয়ে। এবং আপনি জানতে পারবেন কিডনির
জন্য কতটা উপকারী এই চিয়া সিড।
আমি আপনাদের কাছে আমার এই পোষ্টের মাধ্যমে চিয়া সিডের বিভিন্ন উপকারিতা তুলে
ধরেছি। এবং অপকারিতাও তুলে ধরেছি আশা করি আপনি আমার এই পোস্টটি পড়ে উপকৃত হবেন
। যদি আপনি উপকৃত হন তাহলে আপনি আপনার বন্ধুদের কাছে শেয়ার করবেন ধন্যবাদ।
বিডি অনলাইন স্মার্ট এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url