শ্রমের মর্যাদা রচনা ১২ পয়েন্ট SSC HSC JSC পরে ফেলুন

শ্রমের মর্যাদা রচনা ১২ পয়েন্ট  SSC HSC JSC রচনাটি এসএসসি এসএসসি জেএসসি সকল শিক্ষার্থীর জন্য দেয়া হলো চলুন কথা না বাড়িয়ে দেখে আসেন শ্রমের মর্যাদা রচনা ১২ পয়েন্ট।

শ্রমের মর্যাদা  রচনা ১২ পয়েন্ট SSC HSC JSC পরে ফেলুন


শ্রমের মর্যাদা রচনাটি এখানে ওখানে না দেখে আমার এই আর্টিকেলটা পড়ে দেখুন । আপনি সঠিক সহজ ভাষা পাবেন এবং আমার আর্টিকেলটাতে অনেক সুন্দর করে দেয়া হয়েছে শ্রমের মর্যাদা রচনাটি ১২ পয়েন্ট তা নিম্নে দেওয়া হলো।

পোস্ট সূচীপত্র শ্রমের মর্যাদা  রচনা ১২ পয়েন্ট SSC HSC JSC

সূচনা

শ্রম মানব জীবনের অনিবার্য অংশ। শ্রম মানুষকে জীবিকা নির্বাহের সাথে সাথে আত্মমর্যাদাবোধ ও আত্মনির্ভরশীলতা দান করে। বিশ্বের যাবতীয় উন্নয়ন ও অগ্রগতির মূলে রয়েছে মানুষের অক্লান্ত শ্রম ও পরিশ্রম। বিভিন্ন ক্ষেত্রের শ্রমিকদের নিঃস্বার্থ অবদানই সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। তাই শ্রমের মর্যাদা অপরিসীম।

প্রাচীনকাল থেকেই শ্রমকে সম্মান করা হয়েছে। শ্রমের মাধ্যমেই মানুষ খাদ্য, বস্ত্র ও আবাসের মতো মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে পেরেছে। কৃষি, শিল্প, সেবা খাত - সর্বত্রই শ্রমিকদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ছাপ বিদ্যমান। তাদের শ্রম ও ঘামের বিনিময়েই সমাজ এগিয়ে চলেছে। শারীরিক শ্রম থেকে শুরু করে বৌদ্ধিক শ্রম - সবকিছুরই নিজস্ব গুরুত্ব রয়েছে।

আধুনিক যুগে শ্রমের মর্যাদা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। বিভিন্ন আইন ও সংস্থার মাধ্যমে শ্রমিকদের অধিকার ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা হচ্ছে। উপযুক্ত পারিশ্রমিক, সুষ্ঠু পরিবেশ ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ প্রদান করা হচ্ছে। কর্মজীবনে শ্রমের যথাযথ মূল্যায়ন এবং শ্রমিকদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা হচ্ছে। শ্রমিকদের উৎসাহিত করা হচ্ছে যাতে তারা আরও উন্নত ও নির্ভরযোগ্য কাজ করতে পারে।

এভাবেই শ্রমের মর্যাদা ও গুরুত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে আধুনিক সমাজে। শ্রমিকদের অবদান ও তাদের শ্রমের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা প্রত্যেকের দায়িত্ব। শ্রমের মাধ্যমেই মানুষ নিজের মর্যাদা রক্ষা করতে পারে এবং সমাজে স্বীকৃতি পায়।

ঐতিহাসিক পটভূমি

শ্রমের মর্যাদা একটি ঐতিহাসিক বিষয়, যার সূচনা মানব সভ্যতার প্রাচীনতম যুগ থেকেই লক্ষ্য করা যায়। প্রাগৈতিহাসিক যুগের মানুষও শিকার ও সংগ্রহের মাধ্যমে নিজেদের জীবিকা নির্বাহ করতো, যা প্রকৃতপক্ষে একধরনের শারীরিক শ্রম ছিল। তারপর কৃষি সভ্যতার উদ্ভব ঘটলে শ্রমের গুরুত্ব আরও বৃদ্ধি পেতে থাকে।

প্রাচীন গ্রিক ও রোমান সভ্যতায় শ্রমকে একটি নীচু ও হেয় কাজ হিসেবে গণ্য করা হলেও কৃষি, শিল্প ও নির্মাণ খাতে শ্রমিকদের অবদান স্বীকৃত হয়েছিল। ধর্মগ্রন্থগুলোতেও শ্রমকে সম্মানিত করার উপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। ইসলামী ধর্মগ্রন্থ আল-কোরানে শ্রম ও পরিশ্রমকে প্রশংসা করা হয়েছে।

মধ্যযুগে শিল্প বিপ্লবের সাথে সাথে শ্রমিক শক্তির গুরুত্ব আরও বৃদ্ধি পায়। কারখানাগুলিতে শ্রমিকদের ওপর নির্ভরশীল হতে হয়েছে। সেই সময় থেকেই শ্রমিকদের অধিকার আন্দোলন শুরু হয়। ক্রমে শ্রমিক আইন প্রণয়ন, শ্রমিক সংগঠন গঠন ইত্যাদি ঘটতে থাকে।

আধুনিক যুগে শ্রমিক আন্দোলনের মাধ্যমে শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়। বিভিন্ন দেশে শ্রম আইন কার্যকর হয়। শ্রমের সঠিক মূল্যায়ন, নিরাপদ কর্মপরিবেশ ও উপযুক্ত পারিশ্রমিকের বিষয়গুলো গুরুত্ব পায়।  

বর্তমানে শ্রমিকদের অধিকার ও কল্যাণ নিশ্চিত করতে বিভিন্ন প্রচেষ্টা নেওয়া হচ্ছে। একই সাথে শ্রমের মর্যাদা রক্ষায় সচেতনতা সৃষ্টি হচ্ছে। কর্মজীবনে শ্রমের যথাযথ মূল্যায়ন এবং শ্রমিকদের প্রতি সম্মান দেখানো হচ্ছে। এভাবে ঐতিহাসিকভাবে শ্রমের মর্যাদা ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে এবং আজ এটি বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত হয়েছে।

শ্রমের মহিমা

শ্রমের মহিমা অপরিসীম। মানুষের জীবন ও সমাজের উন্নয়নে শ্রমের অবদান অনস্বীকার্য। শ্রমই হল সভ্যতার মূল চালিকাশক্তি। শ্রমের মাধ্যমেই মানুষ নিজের জীবিকা নির্বাহ করে এবং আত্মমর্যাদা বজায় রাখতে পারে। শ্রমই মানুষকে আত্মনির্ভরশীল করে তোলে।

প্রাকৃতিক সম্পদ থেকে শুরু করে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যাবতীয় উন্নতি ও অগ্রগতির মূলে রয়েছে মানুষের অক্লান্ত শ্রম ও পরিশ্রম। কৃষি, শিল্প, সেবা খাত সর্বত্রই শ্রমের ছাপ রয়েছে। শ্রমিকদের অনবরত পরিশ্রমই সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। তাদের ঘামের বিনিময়েই সমাজ অগ্রসর হচ্ছে।

শারীরিক শ্রম থেকে শুরু করে মানসিক ও বৌদ্ধিক শ্রম - সবকিছুরই নিজস্ব গুরুত্ব রয়েছে। শ্রমিকরা দেশের প্রাণশক্তি। শ্রম মানুষকে কর্মঠ ও জীবনের প্রতি দায়িত্বশীল করে তোলে। শ্রম মানুষকে নিয়মানুবর্তী ও শৃঙ্খলাবদ্ধ করে।

আমাদের সমাজ ও দেশের উন্নয়নে শ্রমিকদের অবদান অগণিত। তাই তাদের শ্রম ও পরিশ্রমকে সম্মান করা আমাদের সকলের দায়িত্ব। কর্মক্ষেত্রে শ্রমের যথাযথ মূল্যায়ন এবং পুরস্কৃত করা গুরুত্বপূর্ণ। শ্রমিকদের অধিকার ও কল্যাণ নিশ্চিত করা জরুরি।

শ্রমের প্রতিটি ক্ষেত্রের মর্যাদা ও সম্মান প্রদর্শন করতে হবে। সমাজের প্রতিটি স্তরেই শ্রমকে সম্মান জানানো উচিত। শ্রমিকদের উৎসাহিত করতে হবে যাতে তারা আরও মনোযোগ সহকারে কাজ করতে পারে।  শ্রমকে সম্মানিত করলেই মানুষের আত্মমর্যাদা এবং সমাজের প্রগতি নিশ্চিত করা সম্ভব।

শ্রমের প্রকারভেদ

শ্রম বিভিন্ন প্রকারের হতে পারে। প্রধান প্রকারভেদগুলি নিম্নরূপ:

১. শারীরিক শ্রম: যেখানে মূলত শারীরিক পরিশ্রম প্রয়োজন হয়। যেমন- কৃষিকাজ, নির্মাণ কাজ, বস্ত্র শিল্প ইত্যাদি।

২. মানসিক শ্রম: যেখানে মস্তিষ্কের কাজ বেশি লাগে। যেমন- শিক্ষক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, বিচারক ইত্যাদির পেশাগুলি।

৩. বৌদ্ধিক শ্রম: গবেষণা, লেখালেখি, সৃজনশীল কাজ ইত্যাদি যেখানে বুদ্ধির প্রয়োগ বেশি প্রয়োজন।

৪. কর্মদক্ষতা-নির্ভর শ্রম: একজন সুদক্ষ কারিগর, হস্তশিল্পী বা বাস্তুবিদের কাজ যেখানে বিশেষ দক্ষতা দরকার।

৫. সেবামূলক শ্রম: পুলিশ, সামরিক বাহিনী, ফায়ারসার্ভিস, অটোরিক্সা/ট্রাক চালকদের মতো সেবামূলক পেশাগুলি।

৬. অফিস চাকরি: প্রশাসনিক ও অফিস কাজগুলি যেখানে বসে কাজ করতে হয়।

৭. নৃত্য, অভিনয়, গায়ক ইত্যাদি যেসব শিল্পী পেশায় শারীরিক ও মানসিক উভয়ই প্রয়োজন।

৮. প্রযুক্তি-নির্ভর কাজ: কম্পিউটার প্রোগ্রামার, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, ওয়েব ডিজাইনার ইত্যাদি।

এছাড়াও কিছু কিছু পেশা আছে যেখানে শারীরিক, মানসিক ও বৌদ্ধিক সব ধরনের শ্রমই প্রয়োজন হয়। তাই শ্রমের প্রকৃতি ও প্রয়োজনীয়তা বিভিন্ন পেশার ওপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হয়।

শ্রমের তাৎপর্য ও গুরুত্ব

শ্রমের তাৎপর্য ও গুরুত্ব অপরিসীম। শ্রম মানুষের জীবনযাপনের একান্ত প্রয়োজনীয় অংশ। এর মাধ্যমেই মানুষ নিজের এবং পরিবারের জীবিকা নির্বাহ করতে পারে। তাই শ্রমের গুরুত্ব নিম্নলিখিত কারণগুলির জন্য অনস্বীকার্য আর্থিক স্বাবলম্বী হওয়া শ্রমের মাধ্যমে উপার্জিত আয় মানুষকে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে সাহায্য করে।

আত্মমর্যাদা বজায় রাখা নিজের পরিশ্রমে উপার্জিত অর্থ মানুষের আত্মমর্যাদাবোধকে বৃদ্ধি করে। আত্ম-সন্তুষ্টি অর্জন শ্রমের মাধ্যমে কাজ করে মানুষ আত্ম-সন্তুষ্টি লাভ করতে পারে। সমাজে স্বীকৃতি শ্রমের মাধ্যমে মানুষ সমাজে স্বীকৃতি ও সম্মান অর্জন করতে পারে। সামাজিক অবদান প্রত্যেক ব্যক্তির শ্রম দেশ ও সমাজের উন্নয়নে অবদান রাখে।

নৈতিক মূল্যবোধ তৈরি শ্রমের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে নিষ্ঠা, দায়িত্ববোধ ও নৈতিক মূল্যবোধ গড়ে ওঠে। দেশের অর্থনৈতিক প্রগতি বিভিন্ন খাতের শ্রমিকদের অবদান দেশের অর্থনৈতিক প্রগতিকে ত্বরান্বিত করে। কর্মসংস্কৃতির বিকাশ শ্রম মানুষকে কর্মঠ ও নিষ্ঠাবান করে তোলে এবং কর্মসংস্কৃতির বিকাশ ঘটায়।

সভ্যতার অগ্রগতি মানব সভ্যতার প্রতিটি অগ্রগতির মূলে রয়েছে মানুষের অক্লান্ত শ্রম ও পরিশ্রম।জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন শ্রমের মাধ্যমে উপার্জিত অর্থ মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে সহায়তা করে। এছাড়াও শ্রম আমাদের শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। তাই মানুষের সার্বিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির জন্য শ্রমের ভূমিকা অতুলনীয়।

ছাত্রজীবনের শ্রমের গুরুত্ব

শ্রমের তাৎপর্য ও গুরুত্ব অপরিসীম। শ্রম মানুষের জীবনযাপনের একান্ত প্রয়োজনীয় অংশ। এর মাধ্যমেই মানুষ নিজের এবং পরিবারের জীবিকা নির্বাহ করতে পারে। তাই শ্রমের গুরুত্ব নিম্নলিখিত কারণগুলির জন্য অনস্বীকার্য আর্থিক স্বাবলম্বী হওয়া শ্রমের মাধ্যমে উপার্জিত আয় মানুষকে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে সাহায্য করে। আত্মমর্যাদা বজায় রাখা নিজের পরিশ্রমে উপার্জিত অর্থ মানুষের আত্মমর্যাদাবোধকে বৃদ্ধি করে।

আত্ম-সন্তুষ্টি অর্জন শ্রমের মাধ্যমে কাজ করে মানুষ আত্ম-সন্তুষ্টি লাভ করতে পারে। সমাজে স্বীকৃতি শ্রমের মাধ্যমে মানুষ সমাজে স্বীকৃতি ও সম্মান অর্জন করতে পারে। সামাজিক অবদান প্রত্যেক ব্যক্তির শ্রম দেশ ও সমাজের উন্নয়নে অবদান রাখে। নৈতিক মূল্যবোধ তৈরি: শ্রমের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে নিষ্ঠা, দায়িত্ববোধ ও নৈতিক মূল্যবোধ গড়ে ওঠে।

দেশের অর্থনৈতিক প্রগতি বিভিন্ন খাতের শ্রমিকদের অবদান দেশের অর্থনৈতিক প্রগতিকে ত্বরান্বিত করে। কর্মসংস্কৃতির বিকাশ শ্রম মানুষকে কর্মঠ ও নিষ্ঠাবান করে তোলে এবং কর্মসংস্কৃতির বিকাশ ঘটায়। সভ্যতার অগ্রগতি মানব সভ্যতার প্রতিটি অগ্রগতির মূলে রয়েছে মানুষের অক্লান্ত শ্রম ও পরিশ্রম। 

জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন শ্রমের মাধ্যমে উপার্জিত অর্থ মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে সহায়তা করে। এছাড়াও শ্রম আমাদের শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। তাই মানুষের সার্বিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির জন্য শ্রমের ভূমিকা অতুলনীয়।

আমাদের দেশের শ্রমের মর্যাদা

আমাদের দেশ বাংলাদেশে শ্রমের মর্যাদা অনেকটাই সম্মানজনক। তবে আরো কিছু উন্নয়নের প্রয়োজন রয়েছে। এ বিষয়ে আমরা নিম্নলিখিত বিষয়গুলো লক্ষ্য করতে পারি শ্রমিক আইন প্রণীত হয়েছে যাতে শ্রমিকদের অধিকার সুরক্ষিত হয়। তবে এর বাস্তবায়ন যথেষ্ট নয়। শ্রমিক কল্যাণ ট্রাস্ট ও ভবিষ্য তহবিল গঠিত হয়েছে শ্রমিকদের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে।

কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তাবিধি জোরদার করা হয়েছে। তবে এখনো অনেক শ্রমিক নিরাপদ কর্মপরিবেশ পাচ্ছেন না। ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণের মাধ্যমে শ্রমিকদের যথাযথ পারিশ্রমিক নিশ্চিত করার চেষ্টা হচ্ছে। কিন্তু এখনো অনেক ক্ষেত্রেই শ্রমিকরা ন্যূনতম মজুরি পাচ্ছেন না। কর্মসংস্কৃতি গড়ে তোলার লক্ষ্যে শ্রম দিবস, পুরস্কার প্রদান, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম গ্রহণ করা হচ্ছে।

বিভিন্ন খাতে শ্রমিক সমিতি ও ট্রেড নিয়নগুলোর ভূমিকা রয়েছে যাঘাতে শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে। জাতীয় শ্রম নীতিমালা ২০১২ শ্রমিক কল্যাণ ও অধিকার প্রতিষ্ঠার দিক নির্দেশনা দিয়েছে।তবে সবার জন্য নিরাপদ কর্মপরিবেশ ও উপযুক্ত মজুরি নিশ্চিত করতে এবং শ্রমিকদের অধিকার ও সুযোগ সুবিধাদি বৃদ্ধি করতে আরো প্রচেষ্টা প্রয়োজন। সরকার ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর এ বিষয়ে আরো দৃঢ়তার সাথে কাজ করা জরুরি।

শ্রম বৈষম্য ও নিরসনের উপায়

শ্রম বৈষম্য একটি গুরুতর সমস্যা যা বিভিন্ন কারণে দেখা যায়। এর প্রধান কারণগুলি হল লিঙ্গ ভিত্তিক বৈষম্য, জাতীয় বৈষম্য, শারীরিক প্রতিবন্ধিতা, শিক্ষা ও দক্ষতার অভাব ইত্যাদি। এই বৈষম্যগুলি মানুষের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করে এবং সমাজের উন্নয়নে বাধাগ্রস্ত করে। তাই শ্রম বৈষম্য নিরসনে নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি গ্রহণ করা প্রয়োজন:

আইনগত সুরক্ষা প্রদান সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়নের মাধ্যমে সকল প্রকার শ্রম বৈষম্যকে অবৈধ ঘোষণা করতে হবে এবং কঠোর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। সচেতনতা বৃদ্ধি শ্রম বৈষম্যের ক্ষতিকর দিকগুলি সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সমাজের সকল স্তরে এটি প্রতিরোধ করা যাবে। সমান সুযোগ নিশ্চিত করা সকল নাগরিকের জন্য শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে যাতে তারা দক্ষ শ্রমিক হিসেবে গড়ে উঠতে পারে।

লিঙ্গ ভিত্তিক বৈষম্য দূরীকরণ নারী শ্রমিকদের প্রতি সমান আচরণ নিশ্চিত করতে হবে এবং কর্মক্ষেত্রে নারীদের নিরাপত্তা বৃদ্ধি করতে হবে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সুবিধা প্রদান: কর্মক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য বিশেষ সুবিধা প্রদান করতে হবে যাতে তারা সুষ্ঠুভাবে কাজ করতে পারে।

মজুরি বৈষম্য দূরীকরণ একই কাজের জন্য সমান মজুরি প্রদান নিশ্চিত করতে হবে বয়স, লিঙ্গ বা জাতিগত পার্থক্য নির্বিশেষে। নিরপেক্ষ নিয়োগ প্রক্রিয়া শ্রমিক নিয়োগে কোনো প্রকার বৈষম্য না করে যোগ্যতা ও দক্ষতার ভিত্তিতেই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে।

নাগরিক সমাজের ভূমিকা: নাগরিক সমাজকে শ্রম বৈষম্য প্রতিরোধে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে এবং আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। দৃঢ় রাজনৈতিক ইচ্ছাশক্তি ও সামাজিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে শ্রম বৈষম্য নিরসনে সফলতা অর্জন করা সম্ভব।

ইসলামে শ্রমের মর্যাদা

ইসলামে শ্রমের মর্যাদা অতীব উচ্চ স্থানে স্থাপিত। ইসলামী শিক্ষার প্রধান উৎস আল-কোরআন ও হাদিসে শ্রমের গুরুত্ব ও মর্যাদার ওপর বিশেষভাবে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। কিছু দিক নিম্নরূপ কোরআনে শ্রমকে "সালাত" অর্থাৎ ইবাদাতের সমতুল্য গণ্য করা হয়েছে (সূরা আত-তওবা, আয়াত ১০৫)। এটিই শ্রমের সর্বোচ্চ মর্যাদা।

রাসূল সা. নিজে কৃষিকাজসহ বিভিন্ন শ্রমের সাথে যুক্ত ছিলেন এবং তিনি শ্রমকে আল্লাহর নিয়ামত হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন (বুখারি শরীফ)। কোরআনে অলস, আলসী ও কাজকর্ম না করার লোকদের সমালোচনা করা হয়েছে (সূরা আল-ইনশিকাক)। নিষ্ঠাপূর্ণ শ্রমের মাধ্যমে লাভকে হালাল বলে উল্লেখ করা হয়েছে (সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত ২৭৫)।

শুধুমাত্র নিজের জন্য শ্রম না করে পরিবারের জন্যও শ্রম করার নির্দেশ রয়েছে (বুখারি শরীফ)। শ্রমিক মজুরদের সঠিক মজুরি প্রদান করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, মজুরি কর্মসম্পাদনার পূর্বেই প্রদান করতে বলা হয়েছে (সূরা আত-তওবাহ, আয়াত ১০৯)।

নিজের হাতের পরিশ্রমের মাধ্যমে আয় করা শ্রেষ্ঠ পন্থা হিসেবে বর্ণিত হয়েছে (বুখারি শরীফ)। এছাড়াও ইসলামী ঐতিহ্যে মানুষের জীবন ও সমাজের উন্নয়নে শ্রমিকদের অবদানের কথা বহুল পরিমাণে উল্লেখ করা হয়েছে। ইসলামী শাসনামলে শ্রমিকদের সম্মান এবং শ্রমিক অধিকার রক্ষার নির্দেশনা রয়েছে। এভাবে ইসলামে শ্রমকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং সম্মাননীয় আখ্যায়িত করা হয়েছে।

শ্রমের দৃষ্টান্ত

শ্রম মানুষের জীবনে এবং সমাজের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিভিন্ন খাতে শ্রমের উদাহরণ দেখা যায়। কিছু প্রচলিত দৃষ্টান্ত নিম্নরূপ কৃষিখাত কৃষকরা জমির চাষাবাদ, শস্য উৎপাদন, পশুপালন ইত্যাদি কাজে শারীরিক শ্রম করে থাকেন। নির্মাণখাত নির্মাণ শ্রমিকরা দৈহিক পরিশ্রমের মাধ্যমে বাড়ি, রাস্তা, সেতু, বাঁধ নির্মাণ করে। বস্ত্রশিল্পখাত বস্ত্র শ্রমিকরা পোশাক তৈরিতে নিয়োজিত থাকেন।

প্রশাসনিক কর্মচারী সরকারি বেসরকারি অফিসে মানসিক শ্রমের মাধ্যমে প্রশাসনিক কাজ পরিচালনা করা হয়। সেবাখাত চিকিৎসক, শিক্ষক, ইঞ্জিনিয়ার, আইনজীবীরা মানসিক শ্রমের মাধ্যমে জনসেবা প্রদান করেন। গবেষণাখাত গবেষক ও বিজ্ঞানীরা বৌদ্ধিক শ্রমের মাধ্যমে নতুন আবিষ্কার ও গবেষণা করে থাকেন।

বিমানচালক, পরিবহণ শ্রমিক বিভিন্ন পরিবহন মাধ্যমে নিয়োজিত থেকে দৈহিক, মানসিক পরিশ্রম করেন। কারিগর হস্তশিল্পী দক্ষতা নির্ভর শ্রমের মাধ্যমে বিভিন্ন শিল্পকর্ম ও হস্তশিল্প নির্মাণ করা হয়।  

সামরিক পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা সেবামূলক শ্রম দান করে থাকেন। নৃত্য, অভিনয়, গায়ক পেশায় শারীরিক ও মানসিক উভয় ধরণের শ্রমের প্রয়োজন পড়ে। এছাড়াও আরো বহু খাতে বিভিন্ন ধরণের শ্রমের নমুনা দেখা যায়। তবে মূলত শারীরিক, মানসিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক শ্রমই সর্বত্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

শ্রম বিমুখতা

শ্রম বিমুখতা বা কাজ করতে অনিচ্ছা একটি দুর্ভাগ্যজনক সামাজিক সমস্যা। এর বিভিন্ন কারণ ও প্রভাব রয়েছে:

কারণসমূহ:

  • অলসতা এবং কাজ না করার অভ্যাস গড়ে ওঠা।
  • অপর্যাপ্ত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের অভাব।
  • দরিদ্রতা ও অর্থনৈতিক অভাব যা কাজ করার অনুপ্রেরণা কমিয়ে দেয়। 
  • মাদকদ্রব্য গ্রহণের প্রবণতা।
  • অযৌক্তিক আকাঙ্খা ও আত্ম-সম্মানের অভাব।
  • অভিভাবকদের নেতৃত্বের ও উৎসাহের অভাব।
  • শারীরিক বা মানসিক অক্ষমতা।

প্রভাবসমূহ:

  • দারিদ্র্য ও অনাহার বৃদ্ধি পায়।
  • সমাজে অপরাধ ও নৈতিক অধঃপতন বাড়ে।
  • সামাজিক ও পারিবারিক শৃঙ্খলা নষ্ট হয়।
  • দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্থ হয়। 
  • উৎপাদনশীলতা হ্রাস পায়।
  • মানুষের জীবনযাত্রার মান নিম্নগামী হয়।
  • খাদ্য ও বস্ত্রাদির চাহিদা পূরণ করা সমস্যা হয়ে পড়ে।
  • বেকারত্বের সমস্যা বৃদ্ধি পায়।

শ্রম বিমুখতা দূর করার জন্য কঠোর শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ, সচেতনতা সৃষ্টি, উদ্যোগ গ্রহণ, নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টি ও কর্মসংস্কৃতির প্রচার করা প্রয়োজন। শৈশবকাল থেকেই শ্রমের গুরুত্ব ও মর্যাদা সম্পর্কে শিক্ষা দেওয়া এবং পারিবারিক ও সামাজিক পরিবেশ তৈরি করা অত্যন্ত জরুরি।

উপসংহার

শ্রম অর্থাৎ কাজ করা মানুষের জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শ্রম মানুষকে আত্মমর্যাদা এবং নিজেকে প্রকাশ করার সুযোগ দেয়। একজন মানুষ তার শ্রমের মাধ্যমে নিজেকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করতে পারে এবং তার পরিবারের জন্য উপার্জন করতে পারে। তাছাড়া শ্রম মানুষকে দক্ষতা অর্জন করতে এবং বিভিন্ন সামাজিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে সহায়তা করে।

আধুনিক সমাজে শ্রমের একটি গুরুত্বপূর্ণ মর্যাদা রয়েছে। শ্রমিকদের অধিকার এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বিভিন্ন আইন ও নীতিমালা রয়েছে। শ্রমিকদের যোগ্য মজুরি, নিরাপদ কর্মপরিবেশ এবং সামাজিক নিরাপত্তা প্রদান করা হয়। এটি শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নে সহায়তা করে।

শ্রমের মর্যাদা বজায় রাখতে সকলের সচেতনতা এবং শ্রদ্ধাভাজন অভিবৃত্তি থাকা জরুরি। সমাজে শ্রমিকদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং তাদের অধিকার নিশ্চিত করা অপরিহার্য। শ্রমের সম্মান বজায় রাখলে সমাজের সকল স্তরের মানুষ উৎসাহিত হবে শ্রমে অংশগ্রহণ করতে এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখতে।

লেখক এরমন্তব্য

শ্রমের মর্যাদা রচনা ১২ পয়েন্ট SSC HSC JSC পরে ফেলুন আমি আমার এই আর্টিকেলটাতে শ্রমের মর্যাদা রচনাটি বিভিন্ন জায়গা থেকে নিয়ে সুন্দর করে আপনাদের মাঝে স্থাপন করছি। সুন্দর করে লিখেছি এবং সুন্দর ভাষা ব্যবহার করেছি আশা করা যায় আপনি আমার এই পোস্টটি পড়ে মর্যাদা রচনা ১২ পয়েন্ট জেনে নিতে পারবেন । এস এস সি এইচ এস সি জেএসি  সকল শিক্ষার্থীদের জন্য আপনি যদি আমার এই পোস্টটি করে উপকৃত হন তাহলে বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিবেন ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

বিডি অনলাইন স্মার্ট এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url